শাহরিয়ার আজিজ আকাশ মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। এ বছর ৮ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত হয় তিন দিন ব্যাপী বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলা। এ মেলায়  একটি ক্যাটাগরিতে কৃতিত্বের সাথে প্রথম স্থান অধিকার করে আকাশ। ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়াই পরিবেশ বান্ধব ফ্রিজের মডেল তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় এ ক্ষুদে বিজ্ঞানী ও তার বন্ধুরা। অবশ্য ওর আগ্রহ মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে।

ব্যাপন প্রতিনিধি মোঃ তৌহিদুল ইসলামের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হয় এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী। এখানে সাক্ষাৎকারের মূল অংশ ব্যাপন পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো-

ব্যাপনঃ কেমন আছো, ভাইয়া? পড়াশোনা কেমন চলছে?

আকাশঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভাল। তবে, পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত আছি।

ব্যাপনঃ বিজ্ঞানের প্রতি তোমার আগ্রহ জন্মানোর পেছনে কারণ কী?

আকাশঃ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আমার সপ্তম শ্রেণী থেকেই। সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ভূগোল অংশ পড়তে গিয়ে সৌরজগত নিয়ে পড়ি। এভাবেই ধীরে ধীরে মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ জন্মাতে থাকে।  বিশেষ করে সূর্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করত। এ জন্যেই বর্তমানে অ্যাস্ট্রনোমি ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স আমার প্রিয় বিষয়।

ব্যাপনঃ বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণের চিন্তা আসল কিভাবে? এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলে কিভাবে?

আকাশঃ বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণের জন্য Aeronautics ডিপার্টমেন্টের কিছু ভাইয়া পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেহেতু আমি Astrophysicsএ পড়তে আগ্রহী সেহেতু বিভিন্ন স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং সার্টিফিকেট প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আর আমার বন্ধু মাহমুদ হাসান নাঈম এ ব্যাপারে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করে। তাই এ কৃতিত্বের অংশীদার সেও।

ব্যাপনঃ তোমার প্রোজেক্ট সম্পর্কে ব্যাপন পাঠকদের একটু জানাও।

আকাশঃ আমাদের প্রোজেক্টটি আমার ছোট্ট একটি আবিষ্কার। এটি একটি ফ্রিজ যা ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়াই চলবে এবং নিজের Powerনিজেই Produce করতে পারবে। এর গঠন অনেকটা থার্মোফ্লাস্কের মত। এর ভেতরের অংশ কপার এবং বাহিরের অংশ এলুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। এর বিশেষত্ব হল এটি পরিবেশবান্ধব এবং এতে CFC কিংবা কোন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাব থাকবে না।

ব্যাপনঃ বিসিএসআইআর এর মত একটি প্রতিষ্ঠান আয়োজিত প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার পর তোমার অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল?

আকাশঃ সবাই খুবই ভীষণ খুশি । কারণ হচ্ছে, এটাই আমার প্রথম সফলতা। আর মাতো প্রথমে বলেছিলেন, আমি যা বানাতে চাচ্ছি তা সম্ভব নয়। কিন্তু, একজন মা তখনই সবচেয়ে বেশি খুশি হন, যখন তার সন্তান সেই অসম্ভব কাজটি সম্পন্ন করে সকলের প্রশংসা অর্জন করতে পারে। আর আমার বাবা তো পারলে টেলিফোনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন।

ব্যাপনঃ বিজ্ঞানের কোন Experiment করতে গিয়ে জীবনের কোন মজার অভিজ্ঞতার কথা মনে আছে?

আকাশঃ (হাসি) একবার রাত জেগে কাজ করতে করতে কফি খেতে ইচ্ছে করল। আর কফি বানাতে গিয়ে ভুলবশতঃ আমার ছোট ভাইয়ের জন্য চকলেট বানিয়ে ফেলেছিলাম। অবশ্য সে রাতে পুড়িয়ে ফেলেছিলাম প্রোগ্রামিং এর কাজে ব্যবহৃত চিপটিও।

ব্যাপনঃ এখন থেকে ১০ বছর পরে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চাও?

আকাশঃ এখন থেকে ১০ বছর পর আমি নিজকে নাসায় দেখতে চাই। তবে তারচেয়েও বেশি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্য অনেক বড় কিছু করতে চাই।

ব্যাপনঃ আমরাও দোয়া করি, তুমি যেন সে অবস্থায় যেতে পারো।

তোমার মতে, কি কারণে বাংলাদেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে , আর বিজ্ঞান গবেষণাকে আরও উপযোগী করার ক্ষেত্রে, তোমার মতে বাধা কোথায়?

আকাশঃ আমার মতে বাংলাদেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে যাওয়া কিংবা বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলার মূল কারণ হল অবহেলা। আমি নিজেও অবহেলিত হলে হয়ত এতটুকুও করতে পারতাম না।“হবে না”, “পারবে না” এজাতীয় মন-মানসিকতা আমাদেরকে একেবারেই তলানিতে ঠেকিয়েছে। বিজ্ঞান গবেষণায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবের সাথে সাথে শত বাধা-প্রতিবন্ধকতার কারনে আমাদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত একটি কথা বলি, আমাকে একজন পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার বলেছিলেন, “হবে না”; যা আমার হতাশার কারণ হতে পারত। কিন্তু দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকায় আমি আমার কাজ করে যেতে পেরেছি এবং অনেকক্ষেত্রে সফলও হয়েছি।

ব্যাপনঃ বাংলাদেশে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিয়ে তোমাদের ভাবনা কি? তরুণদের জন্য তোমার পরামর্শ কি?

আকাশঃ তরুণদের জন্য একটাই পরামর্শ দিতে চাই। তা হল একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে পাঠ্যবই এর বাইরের Knowledge অর্জন করা উচিৎ। আমরা আমেরিকা থেকে ১৫০ বছর পিছিয়ে আছি। কিন্তু চেষ্টার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে নিয়ে যেতে পারি অনন্য উচ্চতায়। ওদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূল কারণ, এটা যে তারা শেখার ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের বিষয় নিজেরাই খুঁজে বের করে। এটা তাদের কাছে তাই আর EDUCATION নয় বরং Interesting fact। If you want to have something you never had, then you have to be willing to do something you’ve never done.

ব্যাপনঃ সর্বশেষ নিজের ব্যাপারে এককথায় কি বলবে?

আকাশঃ নিজের ব্যাপারে বলার মত তেমন কিছুই নেই। আমি চেষ্টা করছি কিছু করে দেখানোর। আমি এখন জ্ঞান সমুদ্রের দিকে যাচ্ছি।   আর এটাই আমার Hobby। অবসর সময়ে Astrophysics নিয়ে ব্যস্ত থাকি।

ব্যাপনঃ ব্যাপন ও ব্যাপন পাঠকদের সম্পর্কে কিছু বলো।

আকাশঃ সাক্ষাৎকার নিয়ে অনুপ্রাণিত করায় ব্যাপনকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ব্যাপন পাঠকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, পড়াশোনার পাশপাশি অবসর সময়টুকু গেমস খেলে বা অহেতুক মুভি দেখে নষ্ট না করে শেখার কাজে ব্যয় করো।

ব্যাপনঃ ধন্যবাদ তোমাকে।

আকাশঃ আপনাকে এবং ব্যাপনকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।