আমাদের অনেকেরই ধারণা, ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও বিড়াল ভাল দেখতে পায়। কথাটি পুরোপুরি সত্যি নয়! সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে বিড়াল কখনই দেখতে পায় না। তবে স্বল্প আলোর মধ্যে এরা আমাদের থেকে বেশ ভাল দেখতে পায়। এপরদিকে, দিনের বেলা, অধিক আলোতে এরা তেমন একটা ভাল দেখতে পায় না! চল জেনে নেই, এর পিছনে রহস্য কী।

আমরা জানি, কোন বস্তু থেকে আলো যখন চোখে এসে পড়ে তখন ঐ বস্তুটি দৃশ্যমান হয়। বিড়ালের চোখ তার মাথার আকারের তুলনায় বেশ বড় হয়ে থাকে। তুলনামূলক বড় চোখের মধ্য দিয়ে অনেক বেশি পরিমাণ আলো চোখের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। একারণে অনেক অনুজ্জ্বল বস্তুও তারা ভাল দেখতে পায়। বাইনোকুলারও একইভাবে কাজ করে। বাইনোকুলারের তুলনামূলক বড় লেন্স অনেক বেশি আলো একীভূত করে আমাদের চোখে পাঠায়। তাই আমরা অনুজ্জ্বল এমনকি অদৃশ্য তারাগুলোকেও ভাল দেখতে পাই!

অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চোখের পিছনের দিকে রেটিনা নামক একটি অংশ আছে। এতে প্রধানত ২ ধরনের আলোকসংবেদনশীল কোষ থাকে। এরা ‘রড’ ও ‘কোন’ নামে পরিচিত। রড কোষগুলো অনুজ্জ্বল আলোতে দেখার জন্য অধিকতর উপযোগী। এরা অনুজ্জ্বল আলোকে বর্ধিত করে ফেলতে পারে। ফলে বস্তুগুলো ভাল দেখা যায়। কিন্তু এদের সমস্যা হল, এরা রঙের পার্থক্য ধরতে পারে না। এদের উপস্থিতির কারণেই আমরা রাতের বেলা হালকা তারার আলোতেও রাস্তা ধরে পথ চলতে পারি। রড কোষ রঙের পার্থক্য ধরতে পারে না বিধায় চাঁদের আলোয় সবকিছু সাদা কালো মনে হয়।

কোন কোষগুলো উজ্জ্বল আলোতে ভাল কাজ করে। এরা রঙের পার্থক্য ভাল ধরতে পারে। একারণেই দিনের বেলা সবকিছু রঙীন মনে হয়।

অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের মত মানুষ বা বিড়াল উভয়ের চোখেই এই কোষগুলো থাকে। তবে বিড়ালের চোখে কোনের চেয়ে রড কোষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাই এরা উজ্জ্বল থেকে অনুজ্জ্বল আলোয় বেশি ভাল দেখতে পায়। আমার মানুষের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা সত্যি। ফলে মানুষ অনুজ্জ্বল আলোয় ভাল না দেখলেও উজ্জ্বল আলোয় খুব ভাল দেখতে পায়।

আবার, নিশাচর প্রাণীদের চোখে  রেটিনার পিছনের দিকে ট্যাপেটাম লুসিডাম (tapetum lucidum) নামক এক ধরণের অংশ থাকে। এটি অনেকটা আয়নার মত কাজ করে। চোখের গোলাকার রেটিনায় যে আলো প্রবেশ করে সেটি ট্যাপেটামে প্রতিফলিত হয়ে আবার রেটিনায় এসে পড়ে। ফলে স্বল্প আলোর একটি অংশ আবার দেখতে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এতে অবশ্য বস্তুটি একটু ঝাপসা হয়ে যায়। বিড়াল বা কুকুরের চোখে ট্যাপেটাম লুসিডাম থাকলেও মানুষের চোখে এটি অনুপস্থিত। তাই বিড়াল অনুজ্জ্বল বস্তু ভাল দেখতে পেলেও আমরা পাই না। মজার ব্যাপার হল, এই ট্যাপেটামে আলোর প্রতিফলনের কারণেই রাতের বেলা বিড়ালের চোখ জ্বলজ্বল করে!