সম্পাদকীয় [আগস্ট – সেপ্টেম্বর ২০১৫]

বর্ষ ১ | সংখ্যা ৩

প্রিয় ব্যাপন বন্ধুরা,

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো, বলতো? আশা করছি ঈদের আনন্দ শেষ করে ফুরফুরে মেজাজেই আছো। আর সেই সাথে বোধ হয় প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার প্রফেসর আমাদের বাংলাদেশের সন্তান এম. জাহিদ হাসানের আবিষ্কারের আনন্দের ঢেউ তোমার সম্ভাবনাময় বুকেও ফেনা তুলেছে। সেই ১৯২৯ সালে বিখ্যাত গণিতবিদ ও পদার্থবিদ হারম্যান ভাইলের থিওরীর ‘ভাইল ফারমিওন’ নামক ভরশূন্য অথচ ইলেকট্রনিক চার্জবাহী কণাকে অবশেষে খুঁজে দিলেন আমাদেরই জাহিদ হাসান। তো, আনন্দ তো একটু হওয়ারই কথা আমাদের, তাইনা! দেখনা, ইতোমধ্যে উনার নাম লিখেছি দুইবার, আর দুইবারই মনের অজান্তে নামের আগে ‘আমাদের’ শব্দটি উল্লেখ করেছি!

মানুষ দূরের জিনিস দেখার জন্য বা চোখের সমস্যা কাটিয়ে কোন কিছু দেখার জন্য সেই ১৩ শতাব্দীতে আবিষ্কার করেছে লেন্স। সে লেন্স দিয়ে কোন কিছুকে ছোট বা বড় করে দেখা যায়। এমনকি এসব লেন্স কাজে লাগিয়ে টেলিস্কোপও তৈরি করেছে মানুষ দূর আকাশের মতিগতি দেখার জন্য। আবার সেসব গতি  প্রকৃতি দেখার জন্য নানান রকমের যানও প্রেরণ করা হচ্ছে মহাকাশে। এইযে, নিউ হরাইজনস এর কথাই ধরো না। ২০০৬ সালের ১৯ জানুয়ারী রওয়ানা হয়ে ৪৭০ কোটি কিলোমিটার দূরে গিয়ে বেচারা এখন প্লুটোর ছবি তুলতে ব্যস্ত। তোমরা তো জানোই ছবি তোলার জন্য বা স্বাভাবিকভাবে দেখার জন্য যে জিনিসটি অত্যাবশ্যকীয় সেটা হচ্ছে আলো। কারণ কোন কিছু থেকে আলো নির্গত হয়ে বা কোন কিছুর উপর আলো আপতিত হয়ে ফিরে আমাদের চোখে আসে বলেই আমরা তা দেখতে পারি; সেকথা তো অনেক পূর্বেই বিজ্ঞানী ইবনে হাইসাম বলে গিয়েছেন।

কিন্তু যদি এমন হয় যে আলো কোন বস্তু থেকে আসতে পারছেনা, তখন কি হবে? স্বাভাবিকভাবেই তখন আর তাকে দেখা যাবেনা। এমনই ঘটনা ঘটে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবরে। সেখানে আলো আটকে যায় আর ফেরত আসেনা। আর সাধারণত আয়তনে সূর্যের সমান ও ১৫-২০ গুণ ভরের তারকারাই কৃষ্ণবিবর হয়ে থাকে। তাহলে চিন্তা করে দেখ, অসংখ্য দৃশ্যমান তারকার মাঝে এরকম অদেখা তারকাও যদি অবস্থান করে তাহলে এই মহাবিশ্বের মোট তারকার সংখ্যা কত, আর এই মহাবিশ্বটাই বা কত সুবিশাল! ভাবতেই শিউরে উঠতে হয় !

আইনস্টাইনের বিখ্যাত রিলেটিভিটি থিওরী দিয়ে যে কত কিছুই ব্যাখ্যা করা যায়, তার হিসেব কষে শেষ করা কঠিন! এমনকি সে থিওরী অনুসারে ছোট কোন ঘরের মধ্যে দৈর্ঘ্যে বড় কোন জিনিসও যে রাখা যেতে পারে, সেটা আগে কখনও ভাবিনি। তবে এবারের প্যারাডক্স তেমনটাই ভাবিয়েছে বৈকি।

বিজ্ঞানের অগ্রসরতার কল্যানে অনেক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং থিওরি আমাদের কাছে এসেছে; আর আমরা সেসব পেয়ে গেছি উত্তরাধিকার সূত্রে। কিন্তু সেসব পদ্ধতি কিভাবে আসল, কার হাত ধরে আসল, কত রকমের পরিশ্রমের ফসল ছিল সেগুলো, তা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কাছে অজানা। অথচ সেসব জানার মধ্য দিয়ে আমরাও পারি উদ্বুদ্ধ হতে এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করতে। সে লক্ষ্য নিয়েই তাই ব্যাপনের এবারের পরিবেশনায় রয়েছে গননা পদ্ধতির উপর আলোচনা, আছে এক্স-রে আবিষ্কারের সময়কার কার্টুন; আর বরাবরের মত আবিষ্কারের পেছনের গল্প তো থাকছেই। আমরা অসুখ-বিসুখে যেসব ঔষুধ সেবন করে থাকি সে ঔষুধকে বাজারে আসতে কতটা সময় ধরে যে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়- ‘ড্রাগ ডিসকভারি’ নামক নিবন্ধের মধ্য দিয়ে সে খবরই আমাদেরকে জানিয়েছে নোমান।

খেয়াল করে দেখো, আমাদের বেশ কয়েকটি লেখাটেই লেখকগণ প্রত্যাশা জ্ঞাপন করেছেন যেন তোমরা বড় হয়ে বিজ্ঞানের বড় বড় সব আবিষ্কার করতে পার, মানব সভ্যতাকে উপহার দিতে পার অজানা সব তথ্য আর জীবনমান উন্নত করার নানাবিধ অত্যাধুনিক আবিষ্কারসমূহ। সেই সাথে অজানাকে জানার যে দায়িত্ব আমাদের, সে দায়িত্ব পালনেও যেন অগ্রসর হতে পারো আর দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারো সেটাও আমাদের প্রত্যাশা। যেমনটা করেছেন আমাদের প্রফেসর জাহিদ হাসান। ব্যাপন পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের অভিনন্দন আর শুভকামনা স্যারের প্রতি। তাঁর সে পথ ধরে তোমরাও একদিন আমাদেরকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ করে দেবে, সে প্রত্যাশায়ই নিবেদন করছি ব্যাপন বিজ্ঞান সাময়িকীর তৃতীয় সংখ্যা।