সম্পাদকীয় [জুন – জুলাই ২০১৫]

বর্ষ ১ | সংখ্যা ২

ইদানিং হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় যেন পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠছে। পরপর কয়েকদিন ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার কারণেই বোধ হয় এমন অনুভুতি মনের মধ্যে। সর্বদা ভূমিকম্পাতঙ্কে ভুগছি।… কয়েকদিন আগে জনৈক ব্লগারের এমনই একটি পোস্ট চোখে পড়ল। অনেকেরই এমনটি হচ্ছে হয়ত। সেটা যাইহোক, সম্প্রতি ভূমিকম্পের কারণে নেপালে যে মানুষগুলো জীবন হারিয়েছে, যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা বর্ননাতীত। আমরা তাদের জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে ভূমিকম্প প্রতিরোধক বিল্ডিং তৈরি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি দেশের কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নেবেন, তেমনটাও প্রত্যাশা করছি। পূর্ব থেকে এ ব্যাপারে খুব একটা সচেতনতা বা আগ্রহ না থাকলেও বড় ধরনের কোন ভূমিকম্প হলেই আমাদের সবার মাঝে এ ব্যাপারে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। ভূমিকম্প কি, কেন হয়, কিভাবে হয়, এর পেছনের কৌশলগুলো কি- প্রভৃতি প্রশ্ন সবার মধ্যেই ঘুরপাক খায়। আর যে জিনিসটা জানা খুব জরুরী, কিন্তু অনেকেই জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেনা, সেটি হচ্ছে- ভূমিকম্প হওয়ার সময় আমাদের কি করা উচিৎ। যেটা না জানার কারণে ভুকম্পন শুরু হলে সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বা লাফিয়ে পড়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলে।  কিন্তু যথাযথ জ্ঞান থাকলে অনেক সমস্যা থেকেই রেহাই পাওয়া সম্ভব। সঙ্গত কারণেই তাই ব্যাপনের এবারকার প্রচ্ছদে স্থান দিতে হল ইঞ্জিনিয়ার সাব্বিরের লিখাটিকে।

অনেক অনেক মুখরোচক গল্প বিজ্ঞান জানার ক্ষেত্রে কাজে দেয়। যেমন ধরো, বিজ্ঞানী নিউটনের সামনে আপেল পড়ার গল্প। সে গল্প সত্যি হোক আর নাই হোক, তাঁর আবিষ্কৃত ‘মহাকর্ষ বল’ কিন্তু সত্যিই যুগান্তকারী এক আবিষ্কার। ওটা ছাড়া অনেক কিছুরই উত্তর মেলানো ভার। ১৪ বিলিয়ন বছর বয়সী এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কণাই এ মহাকর্ষ বলের অধীন; তা সে বল কম বা বেশী যাই হোক না কেন। কণার কথা যখন আসলই তখন কণার সন্ধানে যত প্রচেষ্টা চলেছে বিভিন্ন সময়ে সেসবের খোঁজও আমরা করতে পারি। ক্ষুদ্রতম কণাসমূহের খোঁজ করতে গিয়ে অনেকেই নোবেল প্রাইজ পর্যন্ত পেয়ে গিয়েছেন। সেসব নোবেল বিজয়ীদের কাহিনীসহ স্যার আইজ্যাক নিউটনের ব্যাপারে জানার আমন্ত্রণ করছি।

ব্যাপনের ম্যাজিক প্র্যাকটিস করেনা এমন ব্যাপন বন্ধুর জুরি মেলা ভার। সায়েন্টিফিক ম্যাজিসিয়ান ব্যাপন বন্ধুদের কাতারে নিজেকেও মেলে ধরার লোভ সামলাতে পারিনি বলেই এ সংখ্যার প্রথম ম্যাজিক প্র্যাকটিস করতে গিয়ে বইয়ের কাভার ছিড়ে ফেলেছি। ভয় পাচ্ছি, সারাদেশে কত কত বইয়ের মলাটই না ছিড়ে যায়। আগেই বলে রাখছি, মলাট ছিড়লেও বই কিন্তু আলাদা করা সম্ভব হবে না; তা যতই টানাটানি করোনা কেন!

মানুষের মনের মাঝে কত কত অদ্ভুত ইচ্ছেইনা হয়। সাধ্য থাকলে সেসব ইচ্ছে পূরনও সম্ভব হয় অনেক ক্ষেত্রে। তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ- সমূদ্রের মধ্যে বসবাস। তাও আবার একটি দুটি বাড়ি নয়, সমুদ্রের মধ্যে পুরো শহর তৈরি করে ফেলেছে দুবাইয়ের লোকেরা। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার এসব উদাহরণের পাশাপাশি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার গল্পও কিন্তু কম প্রসিদ্ধ নয়। বিজ্ঞানী কেকুলের সে ভয়ংকর স্বপ্নই যে তার অমীমাংসিত সমস্যাকে সমাধান করে দিতে পারবে, কে তা জানত, বলো! আবার আপেক্ষিকতার ভেলায় চড়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাওহীদের টাইম মেশিন বানানোর স্বপ্নও যে একদিন সত্যি হবেনা, কেইবা তা বলতে পারে! যেদিন তানভীরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, সেদিন হয়ত আমাদের ছোট্ট বন্ধু তাওহীদই ‘বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী তাওহীদ’-এ পরিনত হবে। সেদিনের সে সফলতা যে ব্যাপনের কত বড় কাম্য, সেটা ব্যাপন পরিবারের সবাই হৃদয় দিয়ে অনুভব করে থাক নিশ্চয়ই!

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার জন্য আমাদের দেশেও কিন্তু অনেক রকমের সহযোগিতা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন বিসিএসআইআর বাংলাদেশে বিজ্ঞানের নানান দিক নিয়ে গবেষনাকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে নানাবিধ আয়োজন করে রেখেছে। এখানকার সুবিশাল লাইব্রেরীতে কিন্তু আমরা চাইলেই এক্সেস পেতে পারি। বিজ্ঞানী হওয়ার সমস্ত সহযোগিতাগুলো কাজে লাগানো এবং বিজ্ঞানকে আরো অনেক অনেক এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বটুকু তোমাদের কাঁধে দিয়েই এবারের ব্যাপনকে নিবেদন করছি। সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও  শুভকামনা।