| খালিদ সাইফুল্লাহ |

বর্তমান সভ্যতা ক্রমে ক্রমে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। আর এ প্রযুক্তির শীর্ষ স্থান দখল করে অছে কম্পিউটার। এ যন্ত্র আবিস্কারের ফলে মানব সভ্যতা জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে নতুন এক দিগন্তের সন্ধান পেয়েছে। এর দ্বারা মানব জাতি নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। তার পরও ভাল আর  মন্দের না কি একই  লগ্নে জন্ম। হয়ত সে জের ধরেই, কম্পিউটারেরও রয়েছে কিছু ক্ষতিকর দিক। যার কারণে মানুষ এ কেন্দ্রিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কম্পিউটার ক্রাইম তার মধে অন্যতম প্রধান।

কম্পিউটারের মাধ্যমে যে সব অপরাধ সংঘটিত হয় সেগুলোই মূলত কম্পিউটার ক্রাইম। এ অপরাধ সাধারণত দুই ধরনের মাধ্যমে হয়ে থাকে: ১.হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে ২.সফটওয়্যারের মাধ্যমে।

হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে যে অপরাধ গুলো সংঘটিত হয় তা মূলত হার্ডওয়্যার কেন্দ্রিকই হয়। যেমন: হার্ডওয়্যারের যেকোন অংশ চুরি, কোন ডিভাইস নষ্ট করা বা যেকোন উপায়ে হার্ডওয়্যারের কোন অংশের ক্ষতি সাধন ইত্যাদি। এ অপরাধ জনিত কারণে কম্পিউটারের মালিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সমস্যা হল মেমোরিতে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি-পত্র খোয়া যাওয়া।

আর  সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে অপরাধ গুলো হয় তার কোনো নির্দিষ্ট প্রকারভেদ না থাকলেও সচরাচর যে ধরণের অপরাধ সংঘটিত তা হল:

হ্যাকিং
সাইবার অক্রমণ
সফটওয়্যার পাইরেসি
ডাটা চুরি
তথ্য পাচার
হ্যাকিং: ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের সংযুক্তি করা যায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন প্রোগ্রামার অন্য কম্পিউটারের নিরাপত্তা কোড ভেঙ্গে ঐ কম্পিউটারে রক্ষিত বিভিন্ন উপাত্ত পরিবর্তন বা নষ্ট করে দিতে পারে। এভাবে তথ্য-উপাত্ত নষ্ট করে দেয়াই হল হ্যাকিং। আর এ জাতীয় কাজে যারা লিপ্ত তাদের কে হ্যাকার বলা হয়। বর্তমানে এ সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সাইবার আক্রমণ: বর্তমানে ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যেমন: আপত্তিকর মেইল প্রেরণ, নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যের কম্পিউটার থেকে অনুমতি ব্যতীত কোনো কিছু নেয়া বা দেয়া, কোন কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার এবং ডাটা ব্যবহার করতে বাধা দেয়া ইত্যাদি। এগুলো সবই সাইবার আক্রমণের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের অপরাধের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই বিশ্বের পরাক্রমশালী শক্তিধররাও আজ   আতঙ্কিত।

সফটওয়্যার পাইরেসি: অন্যের আবিষ্কৃত বা তৈরিকৃত তত্ত্ব বা তথ্যকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজের নামে চালিয়ে দেওয়াকে পাইরেসি বলে। আর প্রস্তুতকারীর বিনা অনুমতিতে কোন সফটওয়্যার কপি করা, নিজের নামে বিতরণ করা কিংবা যৎসামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে নকল করে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রমকে সফটওয়্যার পাইরেসি বলে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া আমাদের দেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে।এর ফলে একদিকে কপিরাইট আইন লংঘিত হচ্ছে অপরদিকে আসল  মালিক নানা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

ডাটা চুরি: কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্কাইভ থেকে বা ভোল্ট থেকে পূর্ব অনুমতি ব্যতীত তথ্য কপি করা বা আহরণ করাই হল তথ্য চুরি। এ ভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, পাসওয়ার্ড, সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর সহ আরও  অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডাটা খোয়া যেতে পারে।

তথ্য পাচার: কোন কোম্পানিতে এমন কোন কর্মী থাকতে পারে যে নিজের স্বার্থে কম্পানির গোপণ ডাটা প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে দিয়ে দিতে পারে। এতে কম্পানির অর্থিক ও পলিসিগত সহ যেকোন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এমন কি পাচার কৃত তথ্যের প্রকার ভেদে কম্পানি দেউলিয়াও হয়ে যেতে পারে।

তবে কোন ক্ষেত্রেই ভয়ের বিন্দু মাত্র কারণ নেই। সমস্যা থাকলে সমাধানও থাকবে। কম্পিউটার জগতের জগতের আরও  অনেক সমস্যা আর  তার সমাধান নিয়ে আগামী সংখ্যায়  আলোচনা করা যাবে। আজ   এ পর্যন্তই্।