বাংলাদেশ-ভারত খেলা হচ্ছে। একদিকে মোস্তাফিজুরের হ্যাটট্রিক চান্স ও অন্যদিকে জয়ের জন্য ১ বলে চার রান। ব্যাট হাতে প্রস্তুত ভারতীয় অধিনায়ক ধোনি। এমন সময় নাকে এলো সুঘ্রাণ। মাথা ঘুরাতেই মাইক্রো ওভেনে রাখা খাবারটার কথা মনে পড়ে গেলো, এখনি বন্ধ করতে হবে সুইচটা! নইলে পুড়ে যাবে স্বাদের খাবার। এমন উভয় সঙ্কটে কী করবে তুমি??

image 75

এমনি অনেক বিপত্তির সহজ সমাধান করে দিবে ব্যাপন বন্ধু আশিকুর রহমানের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি। ওর এই প্রোজেক্টটি এবারের ঢাকা কলেজ বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করে। আশিকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন আমাদের প্রতিনিধি মেহেদী হাসান আলিফ। নিচে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

ব্যাপন: কেমন আছো ভাইয়া?

আশিক: সাক্ষাৎকার দিতে এসে খুবই ভালো লাগছে, অসাধারণ অনুভূতি।

ব্যাপন: তোমার পড়ালেখা কোথায়?

আশিক: আমি মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছি।

ব্যাপন: পড়াশোনা বা গবেষণা কোন বিষয়টায় তোমার আগ্রহ বেশি ?

আশিক: বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা করতে ভালো লাগে। এছাড়াও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করতে দারুণ লাগে।

ব্যাপন: বিজ্ঞানের প্রতি তোমার আগ্রহ কিভাবে জন্মালো?

আশিক: ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু করার আগ্রহ ছিল, আর এই আগ্রহ থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে।

ব্যাপন: তুমি তো বিজ্ঞানমেলায় সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছো!! এ বিজ্ঞানমেলায় তোমার অংশগ্রহণের চিন্তার শুরুটা জানতে চাই।

আশিক: স্কুলজীবন থেকেই বিজ্ঞানমেলার প্রতি আগ্রহ ছিল কিন্তু অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি। কলেজে এসে এটাই প্রথম সুযোগ। তাই এই সুযোগকে যথাসাধ্য কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।

ব্যাপন: মেলায় তোমার প্রোজেক্ট কী নিয়ে ছিল? তোমার অসাধারণ এ প্রোজেক্টের বর্ণনা ব্যাপন বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ করছি।

আশিক: আমাদের প্রোজেক্ট মূলত ইলেক্ট্রনিক্স বেস।

সাধারণত আমাদের বাসাবাড়িতে কোন কিছু অন অফ করতে সুইচ টিপতে হয়। ধরুন আপনি আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন! এই মহূর্তে আপনাকে সুইচ অন বা অফ করতে হবে! তখন আপনাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজ ফেলে উঠতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রোজেক্টের মাধ্যমে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের মাধ্যমে বাসার লাইট, ফ্যান বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি অন অফ করতে পারব। আমরা আমাদের প্রোজেক্ট-এ ব্যবহার করেছি Arduino বোর্ড যা একটি ডিজিটাল সুইচ হিসেবে কাজ করে। প্রথমে Arduino সফটওয়্যার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে ইন্সটল করে নিজের মত করে এডিট করে নেয়া হয়েছে। তারপর Arduino থেকে একটি সার্কিট বোর্ডে কানেকশন দেয়া হয়েছে। এখন শুধু ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ থেকে কমান্ড দিয়েই  লাইট ফ্যান বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি অন অফ করা যাবে। এটা বানাতে মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে।

image 76

ব্যাপন: তুমি কি তোমার এ প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন উপযোগী করা সম্ভব বলে মনে কর?

আশিক: প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন উপযোগী এমনকি আমরা বিজ্ঞানমেলায় আমাদের প্রোজেক্টের বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়ে প্রথম স্থানও অধিকার করেছি

ব্যাপন: বিজ্ঞানমেলায় প্রথম হওয়ার পরে তোমার পরিবারের অনুভূতি কেমন ছিল?

আশিক: ঢাকা কলেজ বিজ্ঞানমেলায় প্রথম হবার পর আমার বাবা-মা অনেক খুশি হয়েছিলেন! তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রিন্সিপাল স্যার! এবং অন্যান্য শিক্ষকরাও !

ব্যাপন: বিজ্ঞানের পরীক্ষা করতে গিয়ে জীবনের কোন মজার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলো ?

আশিক: সাইন্স এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে বেশ কিছু মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে! তার মধ্যে একটি হচ্ছে, মেলায় যখন বিচারক এসে বিভিন্ন প্রোজেক্ট দেখছিলেন ওই মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল যে বিচারকের সামনে যাতে কোন সমস্যা না হয়। যা ভয় করছিলাম তাই হল। যেই বিচারক এলেন অমনি আমাদের ল্যাপটপের কানেকশনে সমস্যা হল। কিন্তু আমার বন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষুতার সাথে তা ঠিক করে দিল।

ব্যাপন: এ প্রোজেক্টে কাজ করতে গিয়ে সাধারণভাবে তুমি কী কী অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছো?

আশিক: প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় জিনিস সহজে পাওয়া যায় না। আর পেলেও সেগুলোর দাম অনেক বেশি।

ব্যাপন: এসব সমস্যা কাটিয়ে তোলার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সরকার বা অন্য পর্যায় থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা আশা করো ?

আশিক: এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার ও বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাবকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজ্ঞানচর্চার উপকরণ সহজলভ্য ও দাম নাগালের ভেতর আনতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমার আহবান থাকবে বেশি বেশি বিজ্ঞানচর্চা করতে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল হতে হবে এবং কল্পনার পরিধি বাড়াতে হবে নতুন জিনিস উদ্ভাবন করার চেষ্টা করতে হবে।

ব্যাপন: বাংলাদেশে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিয়ে তোমাদের ভাবনা কী? তরুণদের জন্য তোমার পরামর্শ কী?

আশিক: যে দেশ বিজ্ঞানচর্চায় যত বেশি এগিয়ে সে দেশ তত বেশি উন্নত। তাই আমাদের দেশের তরুণসমাজকে বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। পাঠ্যবই এর পাশাপাশি অন্যান্য বিজ্ঞানবিষয়ক বই পড়তে হবে।

ব্যাপন: অনেক ক্ষেত্রেই দিন দিন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা আর মূল্যবোধের অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে কোন কোন পর্যায় থেকে কী কী করণীয় থাকতে পারে বলে মনে কর?

আশিক: বর্তমান তরুণসমাজের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে।

ব্যাপন: “ব্যাপন”ম্যাগাজিন সম্পর্কে তোমার মন্তব্য?

আশিক: ব্যাপন ম্যাগাজিন আমার খুব ভালো লাগে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য খুব সুন্দর একটি বই।

ব্যাপন: বিজ্ঞানের কাজকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপনের প্রতি তোমার পরামর্শ-

আশিক: বিজ্ঞানের কাজকে এগিয়ে নিতে ব্যাপন এর উচিত বিজ্ঞানবিষয়ক কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।

ব্যাপন: ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার সার্বজনীন সাফল্য করছি।

আশিক: ধন্যবাদ আপনাকেও।