| মাহমুদুল হাসান কাজল |

 

যুগান্তকারী আবিষ্কারের আর এর পেছনের অনবদ্য গল্প নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজন আবিষ্কারের গল্প। আজ থাকছে রান্নাঘরের দুই অপরিহার্য সামগ্রী মাইক্রোওয়েভ ওভেন আর নন-স্টিক ফ্রাই প্যান এর কথা।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন

পার্সি স্পেন্সার আমেরিকার বিখ্যাত অস্ত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘র‍্যায়েথন’ এর একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অনেকের মত তিনিও আমেরিকান নেভি-তে খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ইলেকট্রনিক্সের জিনিয়াস হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক হয়। ১৯৪৫ সালের কথা, স্পেন্সার একটি ‘ম্যাগ্নেট্রন’ নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন। ‘ম্যাগ্নেট্রন’ রাডারে অণুতরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ এর উৎস হিসেবে কাজ করত। দুটি চৌম্বক ক্ষেত্রের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে এক ধরণের উচ্চ কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট তরঙ্গ নির্গত হয়। তখনও পর্যন্ত

‘ম্যাগ্নেট্রন’ ব্যবহৃত হত রাডারের পাওয়ার সোর্স বা শক্তির উৎস হিসেবে। যাহোক, ম্যাগ্নেট্রন নিয়ে কাজ করার সময় মিঃ স্পেন্সার তার প্যান্টের চারপাশে পুড়ে যাওয়ার একটা অনুভূতি পেলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন তার পকেটে থাকা চকোলেট-এর বারটি গলে যাচ্ছে। তাঁর বুঝতে বাকি রইলো না যে ম্যাগ্নেট্রন নিঃসৃত মাইক্রোওয়েভ থেকেই এই ‘বার্নিং সেনসেশন’ বা পুড়ে যাওয়ার উৎপত্তি। ইলেকট্রনিকসের জিনিয়াস সাথে সাথেই কাজে লেগে গেলেন কিভাবে মাইক্রোওয়েভকে নিয়ন্ত্রিতভাবে রান্নার কাজে লাগানো যায়। আর বিশ্বের যে সকল ভোজন রসিকগণ গরম জিনিস ছাড়া খেতে পারে না তাদের জন্য চুলা জ্বালানো ছাড়াই তাৎক্ষণিক খাবার গরম করতে এগিয়ে এল ‘মাইক্রোওয়েভ ওভেন’।

টেফলন

নন-স্টিক প্যান এর কথা জানতো? ঐ যে, যেটাতে ডিম ভাজতে গেলে লেগে যায় না আর অপেক্ষাকৃত কম তেল দিয়েই রান্না করা যায়। এখনও মনে না আসলে ঝটপট রান্নাঘর থেকে দেখে আসতে পারো। আসলে সাধারণ কড়াইয়ের উপর ‘টেফলন’ এর আস্তরন দিয়ে এ ধরনের নন-স্টিক প্যান বা কড়াই তৈরী করা হয়।অপ্রত্যাশিত কিন্তু সৌভাগ্যজনকভাবে মিঃ রয় প্লাঙ্কেট নামের একজন বিজ্ঞানী ‘টেফলনে’ আবিষ্কার করেন। পরের বার ডিম ভাজতে গিয়ে কিন্তু প্লাঙ্কেট সাহেবকে ধন্যবাদ দিতে ভুলো না!

১৯৩৮ সালে রয় প্লাঙ্কেট ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বন নামে এক ধরণের গ্যাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। প্রাথমিকভাবে এই গ্যাসটি রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হত। নির্ধারিত সময়ের পর যখন প্ল্যাঙ্কেট গবেষনার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে আসলেন ততক্ষণে পরীক্ষার পাত্র থেকে গ্যাস উধাও! তার বদলে কিছু সাদা পদার্থ জমা হয়ে আছে যার ধর্ম সম্পর্কে তখনও পর্যন্ত কিছু জানা ছিল না। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্ল্যাঙ্কেট বুঝতে পারলেন যে উদ্ভূত পদার্থটির গলনাংক খুব উচ্চ তাপমাত্রার আর একই সঙ্গে এটি বেশ তেলতেলে। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে একদম সময় নিলেন না মিঃ রয় প্লাঙ্কেট। প্রাথমিকভাবে মিলিটারি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হলেও খুব দ্রুতই টেফলন নামক বস্তুটি তার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা খুঁজে পেল লোহার কড়াইয়ের উপর আর আমাদেরকে দিল কুসুম অক্ষুন্ন রাখা অনবদ্য ‘ওমলেট’।