| মাহমুদুল হাসান কাজল |

ডিনামাইটঃ
বিস্ফোরক দ্রব্যাদির গবেষনা খুব সহজ নয়, নয় হাসি তামাশার ব্যপারও। “আলফ্রেড নোবেল” একজন সুইডিশ রসায়নবিদ ও প্রযুক্তিবিদ। ডিনামাইট আবিষ্কার ছিল তাঁর অনেক পরিশ্রমের ফসল। নাইট্রোগ্লিসারিন কে সুস্থির রাখতে, এমন একটি বিস্ফোরক তরল নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে নোবেল ও অন্যান্য কর্মীরা সম্মুখীন হয়েছিলেন অনেক দুর্ঘটনার যা একটি চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছিলো। ১৮৬৪ সালে সুইডেনের স্টকহোমে একটি বিস্ফোরনে নোবেল তাঁর ভাই ছোট ভাই সহ হারান কিছু সহকর্মীকেও।

কেউ জানতো না আসলে কি করে এই বিস্ফোরন ঘটেছিল। কিন্তু অনেক সন্দেহের ভিড়ে তাঁকেই ঠেলে দেয়া হল এই কারন অনুসন্ধানে এবং এই রকম বিস্ফোরক দ্রব্য কে নিরাপদ ভাবে রাখার উপায় বের করার জন্যে। নাইট্রোগ্লিসারিন এর অস্থিতিশীলতার এই নতুন ধর্মের সাথে নোবেল লাগাতর অনেক গুলো পরীক্ষা করলেন এই বিস্ফোরনের কারন বের করতে এবং এই সব পদার্থকে নিরাপদ রাখতে।

কেউ এমনও বলে থাকেন যে, পরবর্তীতে নোবেল আরও একটি দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে এই পদার্থকে স্থিতিশীল করার উপায় বের করে ফেলেন। নোবেল যখন নাইট্রোগ্লিসারিন পরিবহন করছিলেন তিনি লক্ষ্য করেন যে একটি ক্যান বা বোতল ভুলক্রমে ভেঙ্গে ফুটো হয়ে গেছে। তিনি আবিষ্কার করলেন যে, ক্যানটিতে ছিলো “kieselguhr” নামক একটি পাললিক শিলা যা ঐ তরল কে পরিপূর্ন ভাবে শোষন করে নিচ্ছে। নাইট্রোগ্লিসারিন অনেক ভয়ানক একটি বিস্ফোরক এবং এর নাড়াচাড়াও অনেক সাবধানে করতে হয়, কিন্তু এই ঘটনা নোবেল কে এই সিদ্দান্তে উপনীত করে যে “kieselguhr” আসলেই বিস্ফোরক দ্রব্যের একটি স্থিতিকারক।

স্বজ্ঞানেই নোবেল পরবর্তীতে একটি ফর্মুলা গঠন করেন যা বিস্ফোরক দ্রব্য কে “kieselguhr” এর সাথে মিশ্রিত করে কোন প্রকার বাধা প্রধান করা ছাড়াই। ১৮৬৭ সালে তিনি এই পন্যের পেটেন্ট নিজের নামে করেন যাকে ডিনামাইট নাম দিলেন, যা কন্সট্রাকশন এর অনুশীলন ও বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

image1

এনেস্থেশিয়াঃ
এই দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কার ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠত। “Crawford Long”, “William Morton”, “Charles Jackson” এবং “Horace Wells” নামক গবেষক একত্রে কথা বলছিলেন এনেস্থেশিয়া নিয়ে। তারা অনুধাবন করলেন যে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ইথার এবং নাইট্রাস অক্সাইড (লাফিং গ্যাস) মানুষের ব্যাথা উপশম করতে পারে।

১৮৮০ সালে, এই দ্রব্যের ব্যবহার অনেকটা জনপ্রিয় হয়ে উঠে, তখন এটা বিনোদনের জন্যে ব্যবহৃত হতে লাগলো। এই ধরনের কিছু অনুষ্ঠান কে বলা হতো “লাফিং পার্টি” অথবা “ইথার ফ্রলিক্স”।

১৮৪৪ সালে গবেষক “Horace Wells” একটি লাফিং পার্টিতে অতিথি ছিলেন। যখন তিনি এই লাফিং গ্যাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন তখন অসচেতনতায় পায়ে আঘাত পান ও রক্তপাত হতে থাকে। কিন্তু তিনি শুধু দেখেই যাচ্ছিলেন যে রক্তপাত হচ্ছে তাঁর পায়ে কিন্তু তিনি কোন ব্যাথা অনুভব করেননি।

এরপর Wells এই পদার্থকে এনেস্থেশিয়া রূপে পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার শুরু করেন যখন তিনি নিজের একটি দাঁত অপসারন করার পর তাতে প্রয়োগ করেন ও উপশম লাভ করেন। তখন থেকে এনেস্থেশিয়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যাথানাশক বা চেতনানাশক হিসেবে।

এরপর তিন গবেষক Crawford Long, William Morton, Charles Jackson এবং Horace Wells একে আরও পরিবর্ধন করে দন্ত্য চিকিৎসা সহ সব ধরনের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেন।
image2