| ইঞ্জিনিয়ার মুনতাসির মামুন |

আমাদের অনেকেরই জীবনের লক্ষ্য ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। বিজ্ঞানকে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করে ইঞ্জিনিয়াররা অনেক নতুন নতুন জিনিস তৈরি করে। মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রানী যদি আবার বিজ্ঞান ব্যবহার করে তাহলে তা সত্যিই অস্বাধারণ (বানানটি ভুল হলেও আমরা ইচ্ছে করে এটি ব্যবহার করছি!) কিছু হিসাবে তৈরি হয়। তবে শুধু মানুষ নয়। আমাদের এই পৃথিবীতে আরো অনেক ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে যাদের কর্মকান্ড হয়তো আমরা তেমন ভালো জানিনা বা ভেবে দেখিনা। তাদের কর্মকান্ড মানুষের থেকে কোন অংশে কম নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক কথায় বিস্ময়কর! তেমনি এক প্রাকৃতিক ইঞ্জিনিয়ারের কাজ বর্ননা করবো আজ।

আমরা জানি মধু একটি উপাদেয় খাদ্য। এটির উপকারিতাও অনেক। রোগ নিরাময়ে রয়েছে এর অনন্য ভূমিকা। এই মধু তৈরিকারী মৌমাছিকে ভয়ঙ্কর, বিষাক্ত হিসাবে আমরা অনেকে চিনলেও তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। এরা প্রকৃতির একঝাক অস্বাধারণ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।

তোমরা কি কেউ মৌচাককে কাছ থেকে ভালোভাবে দেখেছো? দেখলে খেয়াল করবে মৌচাকের এক একটা কোষ ছয় কোনাকার হয়ে থাকে। এত সহজ সহজ আকৃতি থাকতে ৬ কোনাকার কেন? মৌমাছিরা মনে হয় একটু বোকাই হবে! আসলে কি তাই?

এসো জ্যামিতি নিয়ে একটু ভেবে দেখি। কোন জায়গাকে পুরন করতে বা কোন জায়গায় মৌমাছির ঘর বানাতে কয়েক ধরনের শেপ বা আকৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। আকাবাকা শেপ ব্যবহার করলে মেলানো কঠিন হয়ে যায়। তাই তাদের জন্য প্রয়োজন একটি সহজ ও সোজাসাপ্টা শেপ।

এমনি একটি সহজ একটি শেপ হলো বৃত্ত। তবে এটার একটা সমস্যা আছে। পাশাপাশি কয়েকটা রাখলে মাঝে ফাক থেকে যায়। ইফেকটিভ হয় না। আবার জোড়া লাগাতে বেশি মোমের দরকার হয়। মোম তৈরি করতে মোমের পরিমানের প্রায় ৮ গুন মধু ব্যবহার করতে হয়। তাই এই মোম তাদের কাছে বেশ মূল্যবান।

তবে ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজের দ্বারাও ইফেকটিভ উপায়ে মৌচাক বানানো যেতে পারতো কিন্তু তা না করে মৌমাছিরা কেন একটি কমপ্লিকেটেড শেপ- ষড়ভুজ বেছে নেয়? এখানেই রয়েছে তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল কেরামতি!

ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজের দ্বারা তৈরি একটি ক্ষেত্রফলের পরিসীমার চাইতে ষড়ভুজ এর পরিসীমা কম হয়। অর্থাৎ মৌচাকটি দৃঢ় ও কমপ্যাক্ট (Compact) হয় যদি তা ষড়ভুজ দিয়ে বানানো হয়! সুতরাং ষড়ভুজ বেশি স্পেস ইফিসিয়েন্ট।

আরেকটি বিষয় সুবিধা হয়। তা হলো জোড়া লাগানো। একসাথে অনেক মৌমাছি মৌচাক বানানোর কাজ করে। ৬ কোনা থাকার কারনে একজনের সাথে আরেকজনের বানানো কোষগুলো সহজেই জোড়া লাগানো যায়, অনেক বেশি অপশন পাওয়া যায়। ভাবতে কি অবাক লাগে তাইনা? একটা ছোট্ট সৃষ্টি কিভাবে এত ক্যালকুলেশন করে তাদের বাড়ি বানায়? কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে পড়ে তারা?

এর উত্তর তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই তাঁর বিজ্ঞানময় গ্রন্থ ‘আল কুরআন’-এ দিয়ে দিয়েছেন। মৌমাছির নামেই নামকরন করা সূরা আন নাহলের ৬৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেনঃ “আর দেখো তোমার রব মৌমাছিদেরকে একথা অহীর মাধ্যমে বলে দিয়েছেনঃ তোমরা পাহাড়-পর্বত, গাছপালা ও মাচার ওপর ছড়ানো লতাগুল্মে নিজেদের চাক নির্মাণ করো”।

স্রষ্টার সৃষ্টি সত্যিই কি বিস্ময়কর!