।মাহমুদুল হাসান জাবির।

বিজ্ঞান মানুষের চলতি পথের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়। মানুষ আদিকাল থেকে সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে উঠে-পড়ে লেগে আছে। এই চেষ্টার ফলশ্রুতিতে মানুষ অনেক রহস্য উদঘাটনও করেছে। হ্যাঁ, সেই রহস্যময়ী বিজ্ঞান নিয়েই আজ তোমাদের সামনে হাজির হওয়া।

ধরো, তোমার বন্ধু তোমাকে চিমটি কাটলো। যার ফলে তোমার অনেক ব্যাথা অনুভূত হলো। বিজ্ঞান তোমার এই ব্যাথা পাওয়ার রহস্য পেয়েছে নিউরনের কারসাজিতে। তোমার চামড়ার নিচে নিউরন নামক একধরনের স্নায়ুকোষ ও বিভিন্ন ধরনের নার্ভ ফাইবার ওঁৎ পেতে রয়েছে।

যেই কোষগুলোর সংযোগ রয়েছে তোমার ব্রেইনের সাথে। তোমার ব্রেইনও নিউরন নামক এই স্নায়ুকোষ দিয়ে তৈরি। যাতে প্রায় ১০,০০০ কোটি কোষ রয়েছে। প্রত্যেকটি কোষের ব্যস ৬ মাইক্রন থেকে ১২০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। এই স্নায়ুকোষ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত।

প্রধানত, এই স্নায়ুকোষ দুই অংশে বিভক্ত। কোষদেহ ও প্রলম্বিত অংশ। এর প্রলম্বিত অংশে দুটি অংশ অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইট থাকে। তোমার অনুভূতির রহস্যে মূলত এই দুটি অংশে রয়েছে। অ্যাক্সন‌ উদ্দীপনা রিসিভ করে এবং পরিবহনের কাজ করে।

অ্যাক্সন‌ উদ্দীপনা গ্রহণ করে পরবর্তী নিউরনে দেয় এবং সেটা তার পরবর্তী নিউরনে দেয়। দুটি নিউরনে অ্যাক্সন‌ এবং ডেনড্রাইট এর মধ্যবর্তী স্থানে ফাঁকা থাকে। যাকে সিন্যাপস বলে। এর মধ্য দিয়ে উদ্দীপনা অ্যাক্সন‌ থেকে ডেনড্রাইট এ যায়।

এই ফাঁকা স্থান বায়ুশূন্য কিংবা বস্তুশূন্য না। এর‌ মধ্যে স্নায়ুসন্ধি হিসেবে এক প্রকার তরল পদার্থ থাকে। যেগুলো তথ্য পরিবাহী। এগুলোকে নিউরোট্রান্সমিটার বলে। একটি নিউরনে প্রায় ৪,০০,০০০ পর্যন্ত ডেনড্রাইট থাকতে পারে।

এদের সংখ্যার উপর এই পরিবহনের কাজ নির্ভর করে। এগুলো দেহের বিভিন্ন ইন্দ্র থেকে তথ্য গ্রহণ করে মস্তিষ্কে পাঠায়। এদের সংখ্যা যত বেশি হবে, তথ্য গ্রহণের ক্ষমতাও তত বেশি হবে। এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে যেতে যেতে উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পৌঁছায় যে, তোমার শরীরে বাহিরের পরিবেশ থেকে ‘স্টিমুলাস’ সেন্ড করেছে।

নিউরন চিমটি চিনে না। সে এটাকে ‘স্টিমুলাস’ মনে করে। এরপর মস্তিষ্ক খোঁজখবর নিতে শুরু করে। আঘাতটা তীব্র নাকি সামান্য নাকি মধ্যম নাকি ইগনোর করে দেয়ার মত। তখন সে ডিসাইড করে চিমটি কাটার পর চিৎকার দিতে হবে নাকি ব্যাথায় কাতরাতে হবে।

এক্ষেত্রে তিন ধরনের নিউরন তথা স্নায়ুকোষ কাজ করে। প্রথমত তোমাকে চিমটি কাটার পর চিমটি মস্তিষ্কে পৌঁছাতে একধরনের নিউরন কাজ করে। যাদেরকে সংজ্ঞাবহ নিউরন (sensory neurone) বলা হয়। অর্থাৎ এটা হচ্ছে গ্রাহক নিউরন (receptor neurone)।

অর্থাৎ এটা উদ্দীপনা গ্রহণ করবে অতঃপর মস্তিষ্কে পাঠাবে। এরপর মস্তিষ্ক থেকে যেখানে চিমটি কাটলো সেখানে তথ্য পাঠাবে আরেক ধরনের নিউরন। যেগুলোকে আজ্ঞাবহ নিউরন বলা যায়। অর্থাৎ চিমটির ফলাফল ফলাতে এই নিউরন কাজ করবে।

যার কারণে একে ফলপ্রদায়ক স্নায়ুকোষ বলা যায় (effector neurone)। আর এই দুই ধরনের নিউরনের কর্মে সমন্বয় সাধন করবে এক ধরনের নিউরন। এগুলোকে সহযোগী স্নায়ুকোষ (interconnecting neurone) বলে। এগুলো মস্তিষ্কেই থাকে।

এই নিউরনের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক স্পন্দনের দ্বারা তথ্য সঞ্চালন হয়। সাধারণত এটি নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থায় নিউরনে প্রায় ৭০ মিলিভোল্ট ঋণাত্মক বিদ্যুৎ সঞ্চিত থাকে। বাইরের কোনো তথ্য/উদ্দীপনা বৈদ্যুতিক ধনাত্মক আধান হিসেবে ভিতরে প্রবেশ করে।

নিউরনে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০ কোটি ধনাত্মক আধান প্রবেশ করতে পারে। একটি নিউরনে আগত ধনাত্মক আধানের পরিমাণ যখন নিউরনের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন অতিরিক্ত আধান পার্শ্ববর্তী নিউরনে চলে যায়। এই প্রক্রিয়ায় নিউরন থেকে নিউরনে তথ্যসঙ্কেত সঞ্চালিত হয়।

সুতরাং তোমার অনুভূতির মূল রহস্যটা বুঝতেই পারছো । আজ এ পর্যন্তই!

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৮। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৩

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

কার্বন ডেটিংয়ের জাদু

চিনে রাখি অসুখগুলি

মস্তিষ্ক দখল

পরমাণু থেকে কণার জগতে

সিন্ধুতীরের মুক্তার কথা

ধূমকেতুর গল্প

মহাশুন্যে বসবাস

মহাশূন্যে বসবাস

লেজার রশ্মির গল্প

মাইনাস ওয়ান বিড়ম্বনা!

ব্লাড গ্রুপিং বৃত্তান্ত

ব্ল্যাক বক্স কীভাবে কাজ করে?

সুপার হাইওয়ে

পিথাগোরাসের ত্রয়ী

রোজার উপকারিতা

মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ

উইন্ড টারবাইনের গল্প

মস্তিষ্ক দখল