।হোসাইন মইন।

পর্ব-২

বন্ধুরা, কেমন আছো সবাই? আশা করি, ভালোই আছো আর চুম্বক নিয়ে চিন্তা ভাবনাও বেড়ে গেছে। তো বন্ধুরা, কি মনে হয় চুম্বকত্বের সাথে সত্যিই তড়িতের বা গতিশীল চার্জের কোন সম্পর্ক আছে? পেলে কিছু ভেবে? চলো দেখি আসলেই কোন বন্ধুত্ব আছে কি না এদের?

আমরা আগের পর্বে দেখেছিলাম পরিবাহীর ভিতর দিয়ে তড়িত প্রবাহিত হলে তার চারপাশে চুম্বকক্ষেত্র উৎপন্ন হয়। তড়িৎপ্রবাহ আসলে তারের ভিতর দিয়ে চার্জের প্রবাহ ছাড়া আর কিছুই না যা আমরা কম বেশি সবাই জানি।

অর্থাৎ, তারের চারপাশের চুম্বকক্ষেত্রের জন্য এই চার্জের প্রবাহ দায়ী কারণ চার্জ প্রবাহ বা তড়িতপ্রবাহ থেমে গেলে আর কোন চুম্বকক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকে না। তো চার্জের প্রবাহ আসলে কিভাবে এই কাজটা করে?

উপরের ছবিতে লাল রঙের তীর চিহ্ন দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের (I) দিক বুঝানো হয়েছে, যার জন্য নীলরঙের তীর চিহ্ন দ্বারা নির্দেশিত দিকে r দূরত্বের X বিন্দুতে সৃষ্ট ক্ষুদ্র চুম্বকক্ষেত্র (dB) দেখানো হয়েছে। (বন্ধুরা এখন থেকে আমরা ক্ষুদ্র কিছু বুঝাতে তার সাথে d ব্যবহার করবো।

যেমন: চুম্বকক্ষেত্র B দ্বারা বুঝানো হয় আর ক্ষুদ্র চৌম্বকক্ষেত্র বুঝাতে শুধু B এর সামনে d বসিয়ে দিলেই চলবে- dB) এই ব্যাপারটাকেই সূত্রের আকার দান করেন দুই ফরাসি জ্যা ব্যাপ্টিস্ট বায়ো এবং ফেলিক্স স্যাভার্ট।

এখন এই চার্জের চলাচল তারের বাইরে আর ভিতরেই হোক না কেন এর জন্য চার্জের আশেপাশে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হবে ঠিক যেমনটা তড়িৎ চলাচলের সময় তারের চারপাশে বৃত্তাকারে উৎপন্ন হয়। নিচের ছবিতে শূন্যস্থানে v বেগে চলমান ধনাত্মক q পরিমাণ চার্জের জন্য আশেপাশে B চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হচ্ছে।

এই চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টির ব্যাপারটা বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়। বন্ধুরা আপেক্ষিক তত্ত্বের নাম শুনেছ কি? সর্বকালের অন্যতম বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এ তত্ত্বের জন্মদাতা। এ তত্ত্বের জন্ম নিয়ে একটা গুছানো কথা প্রচলিত আছে, “প্যাটেন্ট অফিসের ঝাঁকড়া চুলো এক কেরানি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলেন আলোর বেগ এমন আজব ধর্ম কেন মানে? দেখিতো ব্যাপারটা কি! তিনি ভাবলেন আর পৃথিবী কয়েক হাজার বছর এগিয়ে গেল।”

আসলে গতিশীল তড়িৎক্ষেত্র গতির ফলাফল হিসেবে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি করে (অনেকটা বোনাস পাওয়ার মত! যদিও বোনাস না।) এখন যে চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয় তার আবার দিক থাকে। সব কাজে বাইরে থেকে হাত ঠেলে দিলে কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও চৌম্বকক্ষেত্রের দিক নির্ণয়ে বেশ কাজে দেয়।

আগের বারের মতই আমরা ডানহাতের সাহায্য নিবো। এবার ধনাত্মক চার্জ যে দিক বরাবর সামনে যায় সেদিকে বৃদ্ধাঙ্গুল তাক করে হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করলে বাকি আঙ্গুলগুলোর মাথা চৌম্বকক্ষেত্রের দিক নির্দেশ করবে। আচ্ছা বন্ধুরা চার্জটা যদি ঋণাত্মক হয় তাহলে কি হবে বলো দেখি? ……………

একদম ঠিক ধরেছো! বৃদ্ধাঙ্গুল বেগের বিপরীত দিকে তাক করলেই হবে। যারা তড়িৎ প্রবাহের জন্য সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের দিক বের করার পদ্ধতি জানো তারা ঠিকই বুঝে গেছো কেনো বৃদ্ধাঙ্গুল ঋণাত্মক চার্জের জন্য উলটো দিকে তাক করেছি। আর যারা জানো কিংবা বুঝো না তারা ব্যাপনের আগের সংখ্যায় প্রথম পর্বটা ভালো করে পড়ে নাও।

এতক্ষণ যাবত আমরা যা কিছু দেখলাম এতে একটা ব্যাপার আমাদের কাছে পরিষ্কার– তড়িৎ আর চৌম্বক আসলে একই সত্ত্বার ভিন্ন প্রকাশ। একটা সময় পর্যন্ত তড়িত আর চৌম্বক বলকে ভিন্ন কল্পনা করা হত। বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল খাতায় কলম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মিলিয়ে দিলেন এই দুই সহোদরকে।

স্বল্পায়ু এ বিজ্ঞানী এতটাই ক্ষণজন্মা ছিলেন যে তার তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের জন্যই পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলোকে অন্য আঙ্গিকে ভাবতে বাধ্য হয়েছিলন বিজ্ঞানীরা। তড়িৎ আর চৌম্বকত্বের মৌলিক চারটি সমীকরণকে একত্র করে তিনি দেখিয়ে দিলেন আলোসহ সকল তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের বেগ ধ্রুব- এক সেকেন্ডে একলক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল বা প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার।

বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার যখন আট বছর বয়স তখন তার মা পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরবর্তীতে তিনি নিজেও একই রোগে ৪৮ বছর বয়সে ১৮৭৯ সালের নভেম্বরের ৫ তারিখে ইহলোক ত্যাগ করেন।

ম্যাক্সওয়েল

চার্জের কথা শুনলেই আমাদের মনে ইলেকট্রন আর প্রোটনের কথা ভেসে উঠে। এরা কোথায় থাকে তা আমাদের এতদিনে জানা হয়ে গেছে। হ্যাঁ প্রোটন পরমাণুর কেন্দ্র তথা নিউক্লিয়াসে বসে অল্পস্বল্প নড়াচড়া করলেও ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে এর বাইরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে অনবরত ঘুরতে থাকে।

এরা কিন্তু শুধু কক্ষপথ ধরেই ঘুরে না সাথে সাথে নিজে নিজেও পাক খায়। এ পাঁক খাওয়ার ব্যাপারটাকে বলে স্পিন (এখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখি, ইলেকট্রনের স্পিন সংখ্যা ১/২ তথা ইলেকট্রন মহাশয় দুইবার পাঁক খাওয়ার পর তার আগের চেহারায় ফেরত আসে) ।

পরমাণুর ভেতরকার এসব চার্জিত কণার ঘুরাঘুরির জন্য তো তাহলে চৌম্বকত্ব তৈরি হওয়ার কথা! কিন্তু আমরা তো সামান্য কয়েক প্রকার পদার্থ ছাড়া কারোর মাঝেই চৌম্বকত্ব দেখতে পাই না। অদ্ভুত! তবে কি এই ঘূর্ণনের কোন ক্যারিশমা আছে যার জন্য যে কোন পদার্থই ইলেকট্রন প্রোটন থাকার পরও চৌম্বক হতে পারে না?

ভাবতে থাকো বন্ধুরা! সামনের পর্বে না হয় কথা হবে এ ক্যারিশমা নিয়ে।

মার্চ-এপ্রিল ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৬

চিনে রাখি অসুখগুলি

দুরন্ত বাড়ন্ত e

অবলোহিত আলো দেখতে চাও?

মস্তিষ্ক দখল

মহাবিশ্বের স্ফীতি

মাটির ভুবনে

তোমাদের প্রশ্ন আমাদের উত্তর

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন

সহজে মিলাও সুডোকু

ফোটোনিক্স ও গবেষণা

মস্তিষ্ক দখল

ইভিএম কীভাবে কাজ করে?

পৃথিবীর বিপদ যত!

ইউরেনিয়াম: অবিশ্বাস্য শক্তির ভ্রুণ

একটি গ্রহ ও দুটি নিঃসঙ্গ কোটর

মহাশূন্যে বসবাস

চিনে রাখি অসুখগুলি

শুন্যে আমি

চুম্বকত্বের আদ্যপান্ত

অগ্রগতির যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান

মস্তিষ্ক দখল

অনুভূতির রহস্যে!

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

কার্বন ডেটিংয়ের জাদু

চিনে রাখি অসুখগুলি

মস্তিষ্ক দখল

পরমাণু থেকে কণার জগতে

সিন্ধুতীরের মুক্তার কথা

ধূমকেতুর গল্প