রসায়ন

রেডিয়েশন : অসাধারণ ত্যাগের আবিষ্কার

মাবরুর আহমাদ নাকীব

৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Time Icon  

 ৩ মিনিট

প্রিয় অনুসন্ধানী বন্ধুরা,  তোমারা কি হাতঘড়ি ব্যবহার করো? যে ঘড়ির সময় সংখ্যা বিভিন্ন রঙ বিচ্ছুরিত করে। জ্বলজ্বল করে। যদি করে থাকো, তাহলে জেনে নাও তোমার ওই হাতঘড়ি রেডিয়াম প্রযুক্তির কাছে দায়ী। অর্থাৎ রেডিয়াম এমন এক প্রযুক্তি, যা থেকে আলো ঠিকরে বেরোয়। হ্যাঁ! ঠিক ধরেছো। আজ আমরা প্রকৃতির অন্যতম এক মৌল পদার্থ রেডিয়াম সম্পর্কে ধারণা নিতে যাচ্ছি। সেই সাথে তার ফলাফল বা স্বভাব রেডিয়েশন সম্পর্কে। গতবারে আলোচিত ইউরেনিয়ামের সাথে যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রয়েছে। বুঝতে পারছো, রেডিয়াম অবিশ্বাস্য শক্তির আরেক অধ্যায়। যার দিকে আঙুল তুলে মানুষ প্রথম পারমাণবিক শক্তির গল্প বলা শুরু করেছিল। আর এই তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক মৌল রেডিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা ৮৮। জেনে রাখো, কোন পদার্থে যদি পারমাণবিক সংখ্যা অন্তত ৮২ থাকে, তাহলে সে পদার্থ তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়।


সময়টা ছিলো ১৮৯৮ সালের ২৬শে ডিসেম্বর। আইফেল টাওয়ারের শহর প্যারিসের এক ছোট, ভাঙাচোরা, অস্বাস্থ্যকর কুটির এবং গবেষণাগার থেকে একটি খবর চারদিকে তেজস্ক্রিয়তার মতো ছড়িয়ে যেতেই— চারদিকের বাতাসে আলোচনা ভাসতে লাগলো।


বিজ্ঞানমহলে ঠাঁই নিলে এক নতুন হুলুস্থুল। একটি নতুন মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। যা কিনা ইউরেনিয়ামের আলোর চেয়েও কুড়িগুণ অধিক শক্তিশালী। আর এই আলো কাঠ, কয়লা, পাথর, তামা প্রকৃতি কঠিন বস্তুর মধ্যেও অনায়াসে প্রতিফলিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। 

যা পদার্থবিজ্ঞানে পূর্বেকার ধারণার মধ্যে রীতিমতো বিপ্লব হয়ে দাঁড়ালো। আর তার পিছনে যে দুই কাণ্ডারী তাদের জীবন উৎসর্গিত করে দিচ্ছিলেন, তারা হলেন— মহীয়সী মানীয়া ইসক্লোড দোসকা (ইতিহাস যাকে মাদাম কুরি হিসেবে চিনে) এবং তার মহামতি স্বামী প্যাট্রি কুরি।


রেডিয়ামের ফলাফল রেডিয়েশন সম্পর্কে খোঁজখবর লাগানো যাক। রেডিয়াম থেকে বেরিয়ে আসা শক্তিই মূলত রেডিয়েশন হিসেবে পরিচিত। আর এই অদেখা ভয়ঙ্কর শক্তির বৈশিষ্ট্য হলো, তা মৌলের পরমাণু ভেঙে দিয়ে রশ্মি বিকিরণ করে। যা কোন পদার্থকে নিমিষেই ভঙ্গুর করে দিতে পারে। প্রাণীর শরীরকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে কোষের কার্যকারিতা ভেঙে দিয়ে। প্রকৃতির জন্য যা মারাত্মক হুমকিস্বরুপ। একটুখানি রেডিয়েশন তথা তেজস্ক্রিয়তায় প্রভাবে নিমিষেই সকল জীবিত প্রাণ মৃতে পরিণত হতে পারে। বন্ধ হতে পারে জন্ম প্রক্রিয়া।


প্রকৃতিতে বিরল ধাতু ইউরেনিয়ামের লবণ ধাতু থেকে রেডিয়াম এবং পলোনিয়াম মৌলদ্বয় আবিষ্কারের জন্য, তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য ১৯০৩ সালে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয় করেন। বলাবাহুল্য, মানীয়া অর্থাৎ মেরি কুরি ইতিহাসের একমাত্র নোবেলজয়ী, যিনি দুটো ভিন্ন বিষয়ে নোবেলজয় করেন। ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এবং ১৯১১ সালে পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম আলাদা করার জন্য রসায়নশাস্ত্রে। অথচ সতেরো বছর বয়সে জীবনের প্রতি প্রচণ্ড হতাশগ্রস্থ মানীয়া চিরকুটে লিখেছিলো— “নিষ্ঠুর এই পৃথিবী থেকে আমি বিদায় নিতে চাই। যদিও ক্ষতি হবে খুব সামান্যই।” যে ক্ষেত্রে রেডিয়াম সবচেয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তা হলো চিকিৎসা। বিশেষ করে ক্যানসারের মতো মৃত্যুরোগকে ঘায়েল করতে রেডিয়াম পদ্ধতি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলো৷ ফলে ক্যানসার আক্রান্ত বিপুল মানুষ আরো কিছুদিন দুনিয়ার বুকে হেঁটে বেড়ানোর জন্য বিছানা ছাড়তে পারলেন৷

২ বছর

শেয়ার করুন

কপি