আহমদ আব্দুল্লাহ |

প্যারাডক্সের ভুবনে স্বাগতম!

আজকে প্যারাডক্সের মাধ্যমে দুই বন্ধুর মেধার পরীক্ষা নেবো। তবে তার আগে অন্য একটি প্যারাডক্স বলে নেই।

একজন ছেলেধরা একটি বাচ্চা ছেলেকে কিডন্যাপ করলো। লোকটা নিজেকে বেশ চালাক মনে করতো। বাচ্চাটির বাবা লোকটির সাথে যোগাযোগ করলে সে ছেলেটিকে ফিরে পেতে তার বাবাকে একটি শর্ত দিল। সে বললঃ আপনি যদি ঠিক ঠিক বলে দিতে পারেন, আমি আপনার ছেলেকে নিয়ে কী করবো- মেরে ফেলবো, নাকি ফিরিয়ে দেবো- তাহলে আমি ছেলেটিকে ফিরিয়ে দেবো। আর ঠিক অনুমান করতে না পারলে তাকে মেরে ফেলবো।

বাচ্চাটির বাবাও চালাকিতে কম যান না। তিনি বললেন, তুমি ওকে মেরে ফেলবে।

এবার ছেলেধরা লোকটি প্যারাডক্সে পড়ে গেল। কেন? একটু ভাবো, তারপর নিচে পড়ো।

কিডন্যাপার যদি বলে, ‘না আপনি ঠিক বলতে পারেননি, আমি ওকে মারবো না’, তাহলে তাকে কথাটি মিথ্যা প্রমাণের জন্যে ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আবার সে ছেলেটিকে মারতেও পারবে না। কারণ, মারলেই বাবার কথা সত্য হয়ে যাবে যার অর্থ দাঁড়াবে ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এভাবেই ছেলেধরা ধরা খেল। এই হলো এক ধরনের প্যারাডক্স।

আরেক ধরনের প্যারাডক্সে আসলে বাস্তবে সম্ভব কিন্তু আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধির বিপরীত হয় বলে একে প্রাথমিকভাবে অসম্ভব বা ভিন্নরকম মনে হয়। আজকে এমনই আরেকটি প্যারাডক্স নিয়ে আমরা কথা বলবো।

কথা ছিল দুই বন্ধুর মেধার পরীক্ষা নেয়ার। ধরি, দুই বন্ধুর নাম সায়েম ও সিয়াম। দু’জনেরই দুটি করে পরীক্ষা নেয়া হলো। প্রথম পরীক্ষায় সায়েম পেল ৯০ নম্বরের মধ্যে ৬৩। অন্য দিকে সিয়াম পেল ১০-এ ৮। অর্থাৎ, সায়েম পেয়েছে ৭০% নম্বর এবং সিয়ামের শতাংশ হলো ৮০।

এবার ২য় পরীক্ষা। এবার সায়েম পেল ১০-এ ৪। আর সিয়াম পেল ৯০তে ৪৫। শতাংশের হিসেবে যথাক্রমে ৪০% ও ৫০%।

এবার, তোমাকে বিচারক বানিয়ে বলছি, কে ভালো ছাত্র? অর্থাৎ, কার রেজাল্ট বেশি ভালো? একটু ভেবে বলো কিন্তু।

Untitled-9

খুব সহজ প্রশ্ন, তাই না? দুটোতেই সিয়ামের পারসেন্টেজ ভালো। এতো ভাবাভাবির কী আছে? অবশ্যই সিয়াম ভালো, নাকি?

যারা আমার মত খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে, তাদের জন্যে আরেকটু পানি ঘোলা করে দেই। ধরো, দু’জনেই একই সাথে যথাক্রমে ৯০ নম্বর ও ১০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিল। এবার দেখো, ৯০ এর পরীক্ষায় বেশি পেয়েছে সায়েম। অবশ্য ১০ এর পরীক্ষায় বেশি পেয়েছে সিয়াম। তাহলে আসলে কে ভালো ?

কেউ কি মত বদলেছো?

আচ্ছা, এবার অন্যভাবে দেখি। মোট পরীক্ষা হয়েছে  দু’টি। মোট ১০০ নম্বর। মোট নম্বরের মধ্যে সায়েম মোট পেয়েছে ৬৩ + ৪ = ৬৭ অর্থাৎ ৬৭%। অন্য দিকে সিয়াম পেয়েছে ৮ + ৪৫ = ৫৩%।

এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সায়েম ভালো। কিন্তু আসলে আমাদের বিচারের মাপকাঠি কী হবে? কোনটার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো? আমাদের প্রাথমিক তথ্য অবশ্যই গোলমেলে। সেখানে একজনের ৯০ এর পরীক্ষার সাথে আরেকজনের ১০ নম্বরের পরীক্ষা তুলনা করা হয়েছে। এটা সঠিক উপায় নয়। সমান নম্বরের পরীক্ষার তুলনা করে দেখা গিয়েছে দু’জনেই একটি করে জিতেছে। তবে, সায়েম জিতেছে বড় নম্বরের পরীক্ষায়। অন্য দিকে সিয়াম অল্প নম্বরের পরীক্ষায় ভালো করলেও পিছিয়ে পড়েছে বেশি নম্বরের পরীক্ষায়। অতএব, সিয়াম ধারাবাহিক (Consistent) নয়।

আবার মোট নম্বরের পরীক্ষায়ও পিছিয়ে আছে সিয়াম।

ফলাফল: সায়েম বেশি ভালো ছাত্র।

এই প্যারাডক্সটিকে বলা হয় সিম্পসন’স প্যারাডক্স। ১৯৫১ সালে এডওয়ার্ড সিম্পসন প্রথম এটির বর্ণনা দেন। ১৯৭২ সালে থেকে একে এই নামে ডাকা হয়।

দেখা হবে পরবর্তী সংখ্যায়। অন্য কোনো প্যারাডক্সের রাজ্যে-হয়তো আমার লেখা নয়তো তোমার।