।ইকরামুল হাসান।
এক নজরে টিআইসিআই
অবস্থান : পলাশ, নরসিংদী
প্রতিষ্ঠাকাল : ১ম পর্যায় : ১৯৮৯-৯০
২য় পর্যায় : ১৯৯০-৯৬
মোট আয়তন : ১৭.০৩ একর
মোট প্রশিক্ষক : ৪৮ জন
ল্যাব ও কারখানা : ৩৭ টি
নির্বাহী পরিচালক : ড. মোঃ মহিউদ্দিন (২০২৩)
নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা : বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন
ওয়েবসাইট : www.tici.gov.bd
যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সে দেশের রাসায়নিক শিল্প কারখানাগুলো। এই শিল্প কারখানাগুলো যথাযথভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল। আর এই দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য প্রায় প্রতিটি দেশেই সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপন করা হয় ট্রেনিং ইন্সটিটিউট।
আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে অনেকগুলো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। সরকারি পর্যায়ের সবগুলো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন বা সংক্ষেপে বিসিআইসি। বিসিআইসি এর অধীনে আটটি সার কারখানা এবং একটি করে সিমেন্ট, গ্লাস, পেপার, হার্ড বোর্ড এবং ইনসুলেটর ও স্যানিটারীওয়্যার কারখানা রয়েছে।
এই তেরটি সরকারি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি এর পাশাপাশি বেসরকারি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্যেও দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিসিআইসি ১৯৮৩ সালে ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগের বাস্তবায়নের জন্য প্রায় আট কোটি পঁচিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়।
পরবর্তীতে নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়− যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ ১৯৯০ সালে সম্পন্ন হয় এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ একই বছরে শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৬ সালে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হয় প্রায় চল্লিশ কোটি টাকা।
বর্তমানে টিআইসিআই সাতটি বিভাগের অধীনে ৩৭টি সমৃদ্ধ ল্যাব এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছে। সাতটি বিভাগ হচ্ছে- অপারেশন এবং প্রসেস টেকনোলোজি, ইন্সট্রুমেন্টেশন এবং কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিকাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যানালাইটিকাল কেমিস্ট্রি এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি এবং হেলথ, কম্পিউটার এবং ইনফরমেশন টেকনোলোজি।
টিআইসিআই এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। প্রথম ক্যাটাগরির কোর্সগুলো যে কোনো শিল্প কারখানায় কর্মরত কিংবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের জন্য আয়োজন করা হয়। সারা বছর ধরেই বিভিন্ন বিভাগের অধীনের এই কোর্সগুলো চলতে থাকে।
টিআইসিআই-এর ওয়েবসাইট থেকে এই কোর্সের সময়সূচি এবং অন্যান্য তথ্য পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির কোর্সগুলো পরিচালনা করা হয় বিসিআইসি-এর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য। এই ক্যাটাগরির অধীনের এক বছর মেয়াদী দুটি কোর্স রয়েছে।
তৃতীয় ক্যাটাগরির কোর্সগুলো পরিচালনা করা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের অ্যাকাডেমিক কোর্সওয়ার্কের অংশ হিসেবে টিআইসিআইতে তিন থেকে চার সপ্তাহের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে।
এছাড়াও যে কোনো প্রতিষ্ঠান টিআইসিআই-এর সাথে চুক্তির মাধ্যমে তাদের জনবলের জন্য বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
সম্প্রতি কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির সহযোগিতায় টিআইসিআই-এ আরো অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। টিআইসিআই-এ এখন প্রসেস অটোমেশনে এর জন্য প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার (পিএলসি) এর পাশপাশি ডিস্টিবিউটেড কন্ট্রোল সিস্টেমের (ডিসিএস) ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়াও অ্যানালাইটিকাল কেমিস্ট্রি এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে অত্যন্ত আধুনিক গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি (GC-MS, GC-FID, GC-TCD) এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তরল ক্রোমাটোগ্রাফি (HPLC) সংযোজন করা হয়েছে। এ সব কিছু মিলিয়ে টিআইসিআই দেশে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ লোকবল তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
মে-জুন ২০১৯। বর্ষ ৫। সংখ্যা ১
No Comment