সম্পাদকীয় [ডিসেম্বর ২০১৫ – জানুয়ারী ২০১৬]

বর্ষ ১ | সংখ্যা ৫

ব্যাপন বন্ধুরা,

নববর্ষের শুভেচ্ছা দিয়েই শুরু করছি। ২০১৫ সাল শেষ হতে চলেছে আর দ্বারে কড়া নাড়ছে ২০১৬। নতুন বছরের প্রতিটি দিন তোমাদের জন্য শুভ ও সুন্দর হোক।

প্রফেসর জে এন ইসলামের কথা তোমরা নিশ্চয়ই জানো। আজ তোমাদেরকে মহান এ বিজ্ঞানীর ব্যাপারে আরো বেশী করে জানাবো। বিখ্যাত এ বিজ্ঞানী আমাদের দেশেরই সন্তান ছিলেন। অথচ তিনি বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে বিদেশীদের কাছেই বোধ হয় বেশী পরিচিত। দেশপ্রেমের এক আধার ছিলেন তিনি। “এখানে (দেশের কাছে) নিতে আসিনি, দিতে এসেছি”- তাঁর এ বিখ্যাত উক্তি সত্যিই আমাদেরকে ভাবায়, আমরা তাঁর মত দেশপ্রেমিক হতে পারলাম কিনা। এ দেশের শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞান শিক্ষায় এগিয়ে নেয়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি চলে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত এখানেই কাটালেন তিনি। তাঁর জীবন থেকে যদি কিছুমাত্রও শিখি আমরা, সত্যিই অনেক বড় কিছু শেখা হবে। আর সে লক্ষ্যেই তোমাদের জন্য এবারের বিজ্ঞানী পরিচিতিতে থাকছে প্রয়াত শ্রদ্ধেয় জামাল নজরুল ইসলাম স্যার।

বিজ্ঞানীদের নিত্যনতুন আবিষ্কারের মই বেয়ে আমরা পেয়ে যাচ্ছি এমন অনেক কিছু, যেগুলো আমাদের পথ চলাকে করছে সহজ। আর সেরকমই একটি আবিষ্কার থ্রি-ডি প্রিন্টার। তোমার আঁকানো শখের যেকোন কিছুকে প্রিন্ট করে তোমার হাতে তুলে দিতে সক্ষম এ প্রিন্টার। এখন মনে হয়, ইস! এরকম প্রিন্টার যদি ছোট বেলায় আমার একটা থাকত, তাহলে কত চকলেটই না খেয়ে ফেলতাম। আর মজার মজার সব খেলনা তো সব আমারই হত!

‘আলিফ লায়লা’-র কথা তো তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছো। সে কাহিনীর মধ্যে যখন সিন্দাবাদকে তিমির সাথে লড়তে দেখেছিলাম, তখনই তিমির বিশাল দেহের ব্যাপারে ধারণা হয়েছিল। সেই ছোট্ট বেলার কথা। সে তিমির বর্ণনা দিয়েই প্রকৌশলী সাব্বির সাজিয়েছেন তিমির প্রবন্ধ। তিমির গায়কি বৈশিষ্ট, বিশাল তিমির ক্ষুদ্র খাবার, আধো ঘুম আধো জাগ্রত অবস্থা, পানিতে বাস করে বায়ুমন্ডল থেকে শ্বাস নেয়া প্রভৃতি তিমির বিচিত্র দিকগুলো জেনে তোমরা খুব অবাকই হবে।

আলোর গতি নিয়ে কত কথাই না বলেছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি আলো আসলে কী, সেটা নিয়েও কম কথা হয়নি। খোদ বিজ্ঞানীরাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেছেন আলোর সংজ্ঞায়ন আর গতির ব্যাপারে। তবে যে যাই বলুন, তাঁরা পরিশ্রম করে করেই তো আজকের এ সংজ্ঞায়নে পৌঁছতে পেরেছেন। সেজন্য তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ না হলে চলেই না। আলোর সর্বশেষ বেগ যা নির্ণিত হয়েছে, তার সাথে কি কেউ পাল্লা দেয়ার শখ রাখো? সেটা করতে পারলে বেশ কিছু সাইন্স ফিকশনের নায়ক বনে যেতে পারবে তুমি। তোমার জন্যই তাই এবারের প্রচ্ছদে জায়গা দিলাম ‘আলোর গতির ইতিবৃত্ত’-কে।

এ বছর আট বিজ্ঞানী পেলেন বিজ্ঞানে নোবেল। অসাধারণ সব আবিষ্কারের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁদের ঘরে গেছে এবারের পুরস্কার। এ নোবেলের পেছনে যেসব আবিষ্কার কাজ করেছে, সেগুলো কিন্তু হঠাত করেই তাঁরা করে বসেন নি। অনেকেই সেই ষাটের দশক থেকে গবেষণা করছেন। ‘নোবেল স্বীকৃতি’ তাঁরা আজ এসে পেলেন। এ গবেষকরা কাজের স্বার্থে কত কিছুই না করেছেন। জাপানি বিজ্ঞানী তাকাকি কাজিতা কামিওকান্দে তো রীতিমত টোকিও শহর থেকে আড়াই শত কিলোমিটার দূরে ভূ-পৃষ্ঠের এক কিলোমিটার নিচে জিংকের খনির মধ্যে ডিটেক্টর বসিয়ে কাজ করেছেন, মহাজাগতিক রশ্মি-মুক্ত পরিবেশ পাওয়ার জন্য। সঠিক গবেষণার স্বার্থে গবেষণা-পাগল এসব মহৎ ব্যক্তিদের এমন কষ্ট স্বীকার আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। গবেষণার ইথিক্যাল দিকগুলো আসলে এভাবেই পালন করতে হয়, আর তারই হাত ধরে সাফল্য আসে। একই বিষয়ে গবেষণার জন্য কয়েকজন করে বিজ্ঞানী নোবেল ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এবার। এক গ্রুপ নিউট্রিনো কণা নিয়ে কাজ করেছেন আর বাকি দুটো গ্রুপ কাজ করেছেন প্রধানত মানুষের রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে। মহৎ এসব ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তোমাদেরকে নিবেদন করছি ব্যাপনের পঞ্চম সংখ্যা। যে সংখ্যাটি একই সাথে ২০১৫ ও ২০১৬ –কে ধারণ করে রাখবে।