।ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল।

পোস্ট কনকাশন হেডেক

কনকাশন হচ্ছে ট্রমা বা আঘাতের কারণে ব্রেনের ক্ষতি। বিভিন্ন ভাবে কিন্তু এই কনকাশন হতে পারে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, মাথায় আঘাত, মারাত্নক ইনজুরি অথবা এমন কোন ইনজুরি যার প্রভাব ব্রেন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তার ফলে এই সমস্যা হয়। অনেক সময় মাথার বাইরে আঘাতের চিহ্ন থাকে।

কিন্তু আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও কনকাশন হতে পারে। কনকাশনের পরে মাথাব্যথা হলে তাকে পোস্ট কনকাশন হেডেক বলে। এই ধরনের সমস্যা আমাদের দেশে খুবই পরিচিত। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। মারামারিও হচ্ছে অহরহ। আরও নানা দুর্ঘটনার খবর আমরা প্রতিদিন পাচ্ছি।

সুতরাং, আমাদের দেশে পোস্ট কনকাশন হেডেক খুব পরিচিত একটি সমস্যা। পোস্ট কনকাশন হেডেকে মাথাব্যথা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা থাকে। এসবের মধ্যে আছে-

  • মাথাঘোরা
  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
  • মনোযোগের অভাব
  • অস্থিরতা
  • অস্বস্তি

 

পোস্ট কনকাশন হেডেক ডায়াগনসিসের জন্য খুব ভালভাবে ইতিহাস নিতে হবে। প্রয়োজন হলে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করতে হবে। সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করলে অনেক সময় ব্রেনের ভেতর হেমরেজ বা রক্তপাত থাকলে বোঝা যাবে। পোস্ট কনকাশন হেডেকের চিকিৎসায় ব্যথার ওষুধ দেয়া হয়।

তবে চিকিৎসায় অনেক সময় সুফল পাওয়া যায়না। সেক্ষেত্রে নিউরোলজিস্ট এর পরামর্শ নিতে হবে। পোস্ট কনকাশন হেডেক আমাদের দেশে খুবই পরিচিত। তাই এ বিষয়ে সবারেই জানা উচিত।

শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ

অনেকের ধারণা উচ্চ রক্তচাপ শুধু বড়দের হয়। কথাটা যে একেবারেই ভুল তা কিন্তু বলা যাবে না। কিন্তু কথাটি শতভাগ সত্যও নয়। শিশুদেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ উচ্চ রক্তচাপের কারণ প্রাথমিক। আর শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত কিডনি কিংবা অন্য কোন রোগের কারণে হয়ে থাকে।

প্রাথমিক কারণে যে উচ্চ রক্তচাপ হয় তা আর কখনই ভাল হয়না। সারাজীবন ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অপরদিকে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কারণ নির্ণয় করতে পারলে চিকিৎসা সহজ। এসব ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ পুরোপুরি ভাল করা সম্ভব।

শিশুদের রক্তচাপ কত হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হবে তা নিয়ে বিস্তর বির্তক ছিল। বর্তমানে তা সুরাহা করা হয়েছে। বয়স অনুযায়ী চার্ট দেখে তা সহজেই নির্ণয় করা যায়।বড়দের রক্তচাপ মাপার মেশিন দিয়ে শিশুদের রক্তচাপ সঠিক ভাবে মাপা যায়না। তাদের জন্য বিশেষ ধরনের কাফ ব্যবহার করা হয়।

 

তবে আজকাল ইলেকট্রনিক যন্ত্র পাওয়া যায় যার সাহায্যে সহজেই শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ মাপা যায়। দশ বছরের নিচের বাচ্চাদের উচ্চ রক্তচাপ হলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কিডনিজনিত জটিলতা থাকে। কিন্তু যেসব শিশুর ওজন অত্যাধিক বেশী, পরিশ্রম করতে চায়না এবং চর্বিজাতীয় খাবার বেশী যায় তাদের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।

বড়দের উচ্চ রক্তচাপের যেসব লক্ষণ থাকে বাচ্চাদের কিন্তু তেমন থাকেনা। ডাক্তার সহজে সচরাচর শিশুদের রক্তচাপ মাপেন না। কিন্তু শিশু যদি সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়, জন্মের সময় ওজন কম থাকে, হার্টের এবং কিডনির অসুখ থাকে তবে অবশ্যই রক্তচাপ মাপা উচিত। তা না হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাচ্চাদের নানা সমস্যা হতে পারে। বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যাকে আমরা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বলি। খুব ছোট অবস্থায় যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে এবং তা যদি বড় হয়েও থেকে যায় তবে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর এবং কিডনির অসুখ হতে পারে।

বড়দের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে ল্যাবরেটরিতে যেসব পরিক্ষা করা হয় শিশুদের ক্ষেত্রেও একই পরিক্ষা করতে হয়। রক্ত পরিক্ষা করলে ব্লাড গ্লুকোজ, কিডনির অবস্থা এবং হরমোনের মাত্রা বোঝা যায়। প্রস্রাব দিয়ে অ্যালবুমিন যাচ্ছে কিনা তা জানার জন্য ইউরিন বা প্রস্রাব পরিক্ষা করা হয়।

কিডনির আলট্রাসাউনড করা হয় কারণ বাচ্চাদের বেশীর ভাগ উচ্চ রক্তচাপের কারণ কিডনি জনিত। এছাড়া ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম করা হয় হৃৎপিণ্ডের অবস্থা জানার জন্য।উচ্চ রক্তচাপের কারণ তীব্রতা ও জটিলতা অনুসারে চিকিৎসা করতে হয়। সবার ক্ষেত্রে একই ওষুধ কার্যকরী নয়।

ডাইউরেটিক জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়। এসিইইনহিবিটর, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং এআরবি সব ওষুধই শিশুদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা চলে। তবে তা করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে।

এছাড়া ওজন বেশী থাকলে কমাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। চর্বিজাতীয় খাবার ও ফাস্টফুড একেবারেই বর্জন করতে হবে। কেউ কেউ ভাবেন শুধু ওষুধ খেলেই কাজ হবে। কিন্তু নিয়ম মানাও যে চিকিৎসার অন্তর্গত তা ভুলে যান।শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ বিরল হলেও পাওয়া যায়।

সঠিক চিকিৎসা না হলে প্রাণ হারাতে হতে পারে। তাই সচেতন হতেই হবে।

 

অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপ

শিরোনাম শুনে নিশ্চয় অনেকেই অবাক হচ্ছেন। আসলে অবাক করার মতই বিষয়টি। খুব সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমেরিকার গবেষকরা মূলত ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করেছেন। উচ্চ রক্তচাপের অনেক কারণ রয়েছে। তবে ৯৫ ভাগ উচ্চ রক্ত চাপেরই কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না। একে এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন বলে।

বাবা-মার উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হবার কিন্তু সম্ভাবনা থাকে। আমাদের অন্ত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। বিভিন্ন কাজও করে এসব ব্যাকটেরিয়া। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে অন্ত্রের এসব ব্যাকটেরিয়া উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করতে পারে।

এন্টিবায়োটিক দিয়ে তারা কিছু রোগীর অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে দেখেছেন যে, তাদের রক্তচাপ কমে গেছে। আবার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া তারা ইঁদুরের মধ্যে প্রয়োগ করে দেখেছেন ইঁদুরের রক্তচাপ বেড়ে গেছে।  কিভাবে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে তা কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও বের করতে পারেননি।

গবেষণা চলছে; তবে কোনো কোনো গবেষক বলেছেন যে, এসব ব্যাকটেরিয়া থেকে বিভিন্ন এনজাইম নিঃসৃত হয়। সেসব এনজাইম হরমোনের উপর কাজ করে। ফলে কিছু রাসায়নিক উপাদান উৎপন্ন হয়। যেসব উপাদান সোডিয়ামকে ধরে রাখে। সোডিয়াম আবার পানি ধরে রাখে। শরীরে পানির পরিমাণ বাড়ে। বেড়ে যায় উচ্চ রক্তচাপ।

আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই বিষয়ে আরো অনেক তথ্য জানতে পারবো।

 

জুলাই-আগস্ট ২০১৮।বর্ষ ৪।সংখ্যা ২