।রেজওয়ান আহমদ মেহেদী।
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন এইচআইভি, ইবোলা, জিকা ভাইরাসের মত সংক্রামক ভাইরাস ছাড়াও আরো মারাত্মক ভাইরাস আছে যা মানবজাতির জন্য আগামী দিনে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সেগুলো নিয়েই আজকে কথা বলবো।
১. মারবুর্গ ভাইরাস
সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাসদের মধ্যে অন্যতম মারবুর্গ ভাইরাস। লাহন নদীর কাছে একটি ছোট এবং আড়ম্বরপূর্ণ শহরের নাম অনুসারে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। মারবুর্গ ভাইরাস হেমোরেজিক ফিভার ভাইরাস। ইবোলার মতোই মারবুর্গ ভাইরাসটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ঝিল্লি, ত্বক ও অঙ্গগুলির রক্তপাত এবং আক্রমণের কারণ। এতে মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।
২. ইবোলা ভাইরাস
ইবোলা ভাইরাসের পাঁচটি স্ট্রেন আছে। আফ্রিকার দেশ এবং অঞ্চলের নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয়েছে: জারে, সুদান, তাইওয়ান, বান্ডিবগিও এবং রেস্টন। Zaire ebolavirus ভাইরাসটি সবচেয়ে মারাত্মক, যাতে মৃত্যুহার শতকরা ৯০ ভাগ। এটি বর্তমানে গিনি, সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এছাড়াও, আরও কয়েকটি আফ্রিকান দেশে এ রোগের দেখা মেলে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সম্ভবত উড়ন্ত শিয়ালের মাধ্যমে শহরে Zaire ebolavirus ভাইরাসের আগমন ঘটে।
৩. হান্তা ভাইরাস
হান্তা ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের সাধারণ নাম। ১৯৫০ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের সময়় আমেরিকান সৈন্যরা এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের রোগ, জ্বর এবং কিডনি বিকল হওয়া ইত্যাদি।
৪. বার্ড ফ্লু
ফ্লুর বিভিন্ন স্ট্রেনগুলি নিয়মিত প্যানিক সৃষ্টি করে। এতে মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ। এটি একটি RNA ভাইরাস। কিন্তু আসলে H5N1 ভাইরাস দ্বারাই এই ফ্লু হয়ে থাকে। এমন কি তোমরা শুধুমাত্র পোল্ট্রির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমেও এ রোগে সংক্রমিত হতে পারো।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এশিয়াতে এটি দেখা যায়। যেখানে লোকেরা মুরগির কাছাকাছি বাস করে, সেখানেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৫. লাসা ভাইরাস
নাইজেরিয়ার একজন নার্স লাসা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি। ভাইরাসটি চিংড়ির মাধ্যমে আসে। ভাইরাসটি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘটে, যেমন পশ্চিম আফ্রিকা, আবার যে কোনো সময়ে এটি অন্য স্থানেও আবির্ভূত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ শতাংশ চিংড়ি ভাইরাস বহন করে।
৬. জুনিন ভাইরাস
জুনিন ভাইরাস আর্জেন্টাইন হেমোরেজিক জ্বরের সাথে সংশ্লিষ্ট। ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিরা টিস্যু প্রদাহ, স্যাপসিস এবং ত্বকের রক্তক্ষরণ থেকে আক্রান্ত হয়। সমস্যা হলো এর উপসর্গগুলি এত সাধারণ যে, প্রাথমিকভাবে একে ত্বকের সাধারণ কোনো রোগ বলেই ভাবা হয়।
৭. ক্রিমিয়া-কঙ্গো ফিভার ভাইরাস
ক্রিমিয়া-কঙ্গো জ্বর ভাইরাস এটেঁল পোঁকা দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি ইবোলা এবং মারবুর্গ ভাইরাসগুলোর মতই দ্রুত অগ্রগতি লাভ করে। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস। সংক্রমণের প্রথম দিন হতেই জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, ডায়রিয়া ও বমিসহ ত্বকে পিন-আকারের রক্তপাত হতে পারে।
এমন কি যকৃৎও ফুলে যেতে পারে। এটি প্রতিকারে কার্যকর ঔষধটি হলো – ribavirin ।
৮. মাচুপো ভাইরাস
এটি বলিভিয়ান হেমোরেজিক জ্বর (বিএইচএফ ), যা ব্ল্যাক টাইফাস বা অর্ডোগ ফিভার নামেও পরিচিত। ইঁদুর দ্বারা এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ, জ্বর, মাথাব্যথা, ম্যালেরিয়ার মত উপসর্গ দেখা দিলেও নাক ও মুখ দিয়ে মারাত্মকভাবে রক্তপাত হতে পারে।
এটি জুনিন ভাইরাসের মতো হয়। এ রোগের মৃত্যুহার ৫-৩০%।
৯. কেএফডি (কিসানুর ফরেস্ট ডিজিস) ভাইরাস
বিজ্ঞানীরা ১৯৫৫ সালে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বনভূমিতে কিসানু বনে (কেএফডি) এই ভাইরাসটি আবিষ্কার করেন। স্থানীয়ভাবে এটি বানর রোগ বা বানর জ্বর নামে পরিচিত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন এর বাহকের নাম নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এটা ধারণা করা হয় যে, পাখি হতে এ ভাইরাসটি আসতে পারে।
ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি উচ্চতর জ্বর, মস্তিষ্কে যন্ত্রণা এবং পেশীব্যাথা ভোগ করে, যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
১০. ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু জ্বর একটি ধ্রুবক হুমকি। মশার মাধ্যমে (বিশেষ করে এডিস মশা) এ রোগ ছড়ায়। থাইল্যান্ড এবং ভারতে এ রোগটির প্রকোপ বেশি। বছরে ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। বিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়ন জনগণের জন্য ডেঙ্গু জ্বর একটি বিরাট সমস্যা।
জুলাই-আগস্ট ২০১৮।বর্ষ ৪।সংখ্যা ২
No Comment