।তানিম হক।

সেই ছোট কাল থেকে পড়ে আসছি আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই পরিবেশ। আচ্ছা চারপাশে যা কিছু আছে সেসব উপাদান গুলোকে ২০-৩০ গুণ ছোট কল্পনা করা সম্ভব? না, তাহলে তো হাতের ৬ ইঞ্চি মোবাইলও দেখা সম্ভব না। আর যদি ১০০ মিলিয়ন গুণ ছোট করে তোমার সামনে দেওয়া হয় তাহলে কী অবস্থা হবে, দেখতে পাবে তো? হ্যাঁ, পাবে। যদি তোমাকে ন্যানো স্কেলের আকারে আানা হয়।

অনলাইন ডিকশনারি Merriam Webster অনুসারে ন্যানোটেকনোলজি হচ্ছে- The science of manipulating materials on an atomic or molecular scale and especially to build microscope device (as robot)। অর্থাৎ ন্যানোটেকনোলজি হল পারমাণবিক অথবা আণবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণ ভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান।

রির্চাড ক্যামান ১৯৫৯ সালে ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। Scanning Tonnecing Microscope (STM) এর মাধ্যমে ন্যানোটেকনোলজিকে বাস্তবে রূপদান করা সম্ভব হয়েছে। আজকে টেক কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে কত ছোট প্রযুক্তি আমাদের হাতে পৌঁছাতে পারে, আর তা সম্ভব হচ্ছে ন্যানোর কল্যাণে!!

ন্যানোর আকারঃ

  • পরমাণু – ০.১ ন্যানোমিটার।
  • পরমাণু – ০.১৫ ন্যানোমিটার অংশ জুড়ে থাকে।
  • ডিএনএ ডাবল-হেলিক্স (ডিএনএ এর অণু)-২ ন্যানোমিটার ব্যাসরেখা বিশিষ্ট।
  • আদর্শ প্রোটিন- ১০ ন্যানোমিটার লম্বা।
  • আদর্শ ব্যাকটেরিয়া- ২০০ ন্যানোমিটার লম্বা।
  • মানুষের চুল- ৫০,০০০-১০০,০০০ ন্যানোমিটার ব্যাসরেখা বিশিষ্ট।
  • একটি কাগজ- ১০০,০০০ ন্যানোমিটার পাতলা।
  • এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং- ৩৮১ মিটার (১,২৫০ ফুট) লম্বা; ৩৮১×১০ ন্যানোমিটার লম্বা।

ন্যানো প্রক্রিয়াঃ

ন্যানো প্রযুক্তি মূলত দুটি নিয়ম মেনে চলে ১. টপ টু ডাউন: কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়, ২.ডাউন টু টপ : এই প্রক্রিয়া ছোট কোন জিনিসকে একত্র বড় আকার প্রদান করা হয়।

ন্যানো ম্যাটেরিয়ালঃ

হতে পারে তুমি অলরেডি ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করছেন। হতে পারে তুমি ন্যানোটেকনোলজি প্যান্ট পরিধান করে আছো কিংবা তোমার শার্টটি ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি। এমনকি হতে পারে তোমার বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ট্র্যাভেলিং ব্যাগটিও ন্যানোটেকনোলজিতে প্রস্তুত। ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি কাপড়গুলোর তন্তু এতোটাই সূক্ষ্ম যে এতে ধূলোবালুর কণা আটকে থাকতে পারে না, ফলে কাপড় অনেক কম নোংরা হয়।

কিছু ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ক্রিমে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, এতে ক্রিমটি তোমার ত্বকে লাগানো মাত্র এটি টাইটানিয়াম অক্সাইড অথবা জিঙ্ক অক্সাইডের আস্তরণ ফেলে দেয়, ফলে এটি সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মিকে ব্লক করে দেয়। ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি অনেক পেইন্টও এভাবে কাজ করে, ফলে এটি অধিক দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কম ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।

আজকাল ন্যানোঃ

একবিংশ শতকে গবেষণার অন্যতম বিষয় হলো ন্যানো। উন্নত দেশগুলোর গবেষণার সিংহভাগ বাজেট থাকে ন্যানো গবেষণাতে। ইরান ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ন্যানো প্রযুক্তি, বায়ো-টেকনোলজি ও ঔষধ বিষয়ক সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ন্যানো টেকনোলজিকে বলা হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই বিজ্ঞান আবিষ্কৃত ‘আলাদিনের চেরাগ’। মারত্মক সব ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হবে এই প্রযুক্তি। যদিও এর পক্ষে-বিপক্ষে নানান সব যুক্তিও আছে। তারপরও ন্যানো টেকনোলজি-এর ইতিবাচক দিকগুলোই বেশি বলে মনে হয় এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

২০১২ সনে ন্যানো টেকনোলজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থান ৬২ তম। এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে Web of Science (ISI Web Knowledge) এ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের উপর ভিত্তি করে। অনেক ভালো খবর তাই না? ২০১২ সালের Web of Science (ISI Web Knowledge)-এ বাংলাদেশ থেকে বা বাংলাদেশী সম্মানিত বিজ্ঞানী/লেখকদের প্রকাশিত ১২০১টি প্রবন্ধের মধ্যে ৬৭টি লেখা হয়েছে ন্যানটেকনোলজি নিয়ে।

আরও পড়ুনঃ

ফ্লাইং সসার ও অদ্ভুত কিছু ঘটনা

সেমিকন্ডাক্টরের গল্প শোনো 

সৌরজগতের জলাধার

শ্বাস-প্রশ্বাসের গল্প