| হাসান সাঈদ |

হুড়মুড় করে রুমে প্রবেশ করলো রবার্ট ডেভিলা…

চোখে মুখে বিস্ময় ও আতংকের ছাপ। এটা কিভাবে সম্ভব ?

ভেবে কোন কূলকিনারা করতে পারছে না ডেভিলা। কোন ইকুয়েশনও মিলছে না। সকাল ১০.৪৭ থেকে ১০.৫২ এর মধ্যে পর পর ৩ বার ৮ সেকেন্ডের জন্য ইক্লোসারের সমস্ত ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইক্লোসা একটি মহাকাশ স্টেশন। শনি ও ইউরেনাসের মাঝখানে সুতাবিহীন ববের মত ঝুলে আছে এটি এবং একটি উপগ্রহের মত শনিকে প্রদক্ষিণ করে চলছে। ষষ্ঠ বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী মহাকাশ স্টেশন ছিল ইক্লোসা। যদিও বর্তমানে এটি চতুর্থ মাত্রার মাঝারী মানের মহাকাশ স্টেশন।

সম্ভাব্যতার মাপকাঠিতে ইক্লোসারে সমস্ত ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। মহাকাশ স্টেশনে সর্বশেষ একবার ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটেছে, ৩০৫৯ সালে, এখন থেকে ১২ বছর আগে। তখন ডেভিলাইক্লোসা স্কুলে জুনিওর ক্যাডার হিসেবে ভর্তি হয়েছে মাত্র। তখন কিছু রোবটের বিশৃংখলা সৃষ্টির কারনে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরে ইউরেনিয়াম সরবরাহ বন্ধ হওয়ায়এই বিপর্যয় দেখা দেয়। কিন্তু ইক্লোসারের ওপর তার সামান্যতম প্রভাব পরেনি। সেই ঘটনার পর থেকে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্টেশনের সিকিউরিটি আরও বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ রিসার্চে দেখা গিয়েছে, ইক্লোসারে ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ হওয়ার সম্ভাব্যতা ৫.৬৭৮ X ১০-৩৭৪

রবার্ট ডেভিলাকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে ঘুরে দাঁড়ালো ইক্লোসার সিকিউরিটি এবং অপারেশান-ইন-চিপ ডঃ কেইথ গ্যালেন।

“কি ব্যাপার, ডেভিলা? রিপোর্টে কি কোন প্রবলেম ধরা পড়েছে?” একরাশ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করলো ডঃ কেইথ।

“রিপোর্টে সব ঠিক আছে, স্যার। সেন্ট্রাল পাওয়ার ডিভিশনের কোন দুর্বলতা ছিল না। নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরের জ্বালানী তৈরির জন্য ইউরেনিয়ামের আইসোটোপ আলাদা করার প্রক্রিয়াও ঠিক ছিল। সমস্ত প্রক্রিয়ার কোথাও সামান্যতম ভুল ছিল না।”

“তাহলে এটা কিভাবে হতে পারে?” রেগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ডঃ কেইথ।

“আমি দুঃখিত স্যার, কিন্তু একটা অবাক করা বিষয় ধরা পড়েছে। সকাল ১০.৪৭ মিনিট থেকে ১০.৫২ মিনিট পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন ডাটা নেই। মানে এই ৫ মিনিটের সমস্ত ডাটা মিসিং।”

ঠোঁটে কামড় দিয়ে ধরলো ডঃ কেইথ। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,

“কালকের মধ্যে যেভাবে হোক আমাকে সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। ডিরেক্টর জেনারেল স্যার বার বার খোঁজ নিচ্ছেন।”

-“জি স্যার”।

আর কোন কথা না বলে ডঃ কেইথের রুম থেকে বের হয়ে এলো ডেভিলা।

নিজের পকেট থেকে “টি” আকৃতির একটি নীল ধাতব বস্তু বের করলো ডেভিলা। এই ধাতব বস্তুটিকে ‘পিডেক্স’ বলে। ‘পিডেক্স’ এর সাহায্যে সমস্ত কমিউনিকেশন ও ইলেক্ট্রনিকস বস্তুর কন্ট্রোল করা হয়। পিডেক্সের RC বাটনে প্রেস করলো ডেভিলা। মুহূর্তেই ওর সামনে এসে উপস্থিত হল “স্কাই কার” নামক এক ধরনের যানবাহন। প্লেন ও গাড়ির সমন্বয়ে তৈরিকৃত একত্রিংশ শতাব্দীর যানবাহনের মধ্যে অন্যতম সেরা আবিষ্কার এই ‘স্কাই কার’ এবং এটি সাধারণত মহাকাশ ষ্টেশনের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। “স্কাই কারে” উঠে ডেভিলা আবার নিজের টি আকৃতির ধাতব বস্তুর CS বাটনে প্রেস করতেই স্কাই কার চলতে শুরু করলো। স্কাই কারে করে নিজের রুমে ফিরে এলো ডেভিলা।

ফ্রেশ হয়ে নিজের গবেষণাগারে প্রবেশ করলো ডেভিলা। এবার সেপিডেক্সের CS বাটনে চাপ দিল। ডেভিলার সামনে কম্পিউটারের মনিটরের মত হলগ্রাফিক স্ক্রীন ভেসে উঠলো। সমস্ত কম্পিউটার আকৃতিতে বোতামের মতহয়ে এসেছে। বোতাম আকৃতির চিপসের মধ্যে কম্পিউটারের সমস্ত হার্ডওয়্যার অংশ রাখা আছে। আর ঐ চিপস থেকে এক ধরনের আলোক রশ্মি বের হয় যা কম্পিউটারের ভার্চুয়াল টাচ মনিটর তৈরি করে। কম্পিউটার অন করে সে কয়েক দিনের রিপোর্টগুলো আবার ভালভাবে চেক করতে থাকলো।

দুই.

বিপ বিপ শব্দে ঘুম ভাঙল ডেভিলার। রিপোর্টগুলো চেক করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা সে লক্ষ্যই করেনি। কম্পিউটারের হলগ্রাফিক স্ক্রিনে সাইথ মেহলাইনের হাস্যোজ্জ্বল মুখ ভেসে উঠলো। সাইথ মেহলাইন, রবার্ট ডেভিলার খুব ভাল বন্ধু ও অনলাইন রিসার্চ পার্টনার। সাইথ মেহলাইন বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ অ্যানেক্সের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড বায়ো-টেক ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসবিই) ডিপার্টমেন্টের থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। ২৭৮৯ সালের পর থেকে মানুষ পৃথিবীতেই বসবাস করার পাশাপাশি গ্যালাক্সির বিভিন্ন গ্রহে কলোনি স্থাপন করা শুরু করেছে। মানুষ অন্তঃসৌরম-লে গড়ে তুলেছে নামীদামি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। পৃথিবীতে উন্নত মানের লেখাপড়ার সুবিধা খুব কম থাকায় পৃথিবীসহ এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন কলোনি থেকে অনেক শিক্ষার্থী এই সবট্রান্স-গ্যালাক্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। অ্যানেক্স তেমনই একটি বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলগ্রহের উপগ্রহ ফোবাসে এটি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়া যৌথভাবে এটিকে গড়ে তুলেছে। পৃথিবীর খুব কাছে হওয়ায় মানুষ এটাকেই প্রথম পছন্দের মধ্যে রাখে। ইউনিভার্সিটি গুলোর মধ্যে গ্যালাক্টিক  র‌্যাঙ্কিং এর দিক দিয়ে ৪ নাম্বারে অবস্থান করছে অ্যানেক্স।

মনের দিক থেকেও সাইথ মেহলাইনের মত উদার, মহৎ আর পরোপকারি মানুষ আর দ্বিতীয়টি দেখেনি ডেভিলা। অ্যানেক্সের ছাত্র হওয়ার পরও সাইথ মেহলাইনের মধ্যে আজ পর্যন্ত কোন অহঙ্কার দেখতে পায়নি ডেভিলা। সাইথ মেহলাইনকে দেখে সবসময় একধরণের শ্রদ্ধাবোধ অনুভব করে সে।

“হেই ডেভিলা! কেমন আছো?” -মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো সাইথ মেহলাইন।

“একটু টেনশনের মধ্যে আছি। ইক্লোসার পাওয়ার স্টেশনে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কী কারনে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না”।

“একই এঙ্গেল থেকে না দেখে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখার চেষ্টা কর। তাহলে কিছু না কিছু পাবেই।” স্বাভাবিকভাবে বললো সাইথ মেহলাইন।

“তোমাকে কিছু রিপোর্ট পাঠিয়ে দিব। সময় থাকলে একটু ঘেঁটে দেখো”।

“তুমি যে ‘এনএসসি’তে আবেদন করেছিলে তার প্রায় ৯০% কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আসা করি তুমি কিছু দিনের মধ্যেই অ্যানেক্সে চলে আসতে পারবে।”

“যাক অনেক দিন পর একটা ভাল খবর শুনালে। সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল”-উৎফুল্ল হয়ে ডেভিলা উত্তর দিল।

“ওকে, পরে কথা হবে। বাই।”

“ওকে, বাই।”

সাইথ মেহলাইনের পরামর্শ অনুযায়ী আজকের বিষয়টির বিভিন্ন এঙ্গেল নিয়ে চিন্তা করতে করতে থাকলো ডেভিলা। পাওয়ার স্টেশনে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের কোন ভুল ছিল না কিংবা মেশিনের কোন প্রবলেমও ছিলনা। তাহলে বাকি থাকলো হ্যাকিং এর বিষয়টি। কেউ হয়তো পাওয়ার স্টেশনের কম্পিউটার হ্যাক করেছিল। তারপর ৮ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ পাওয়ার সাপ্লাই জ্যাম করেছে। তিনবারই একই ভাবে বিষয়টি ঘটিয়েছে। তাহলে এই কাজ কে করেছে? চীন ও রাশিয়ার সাথে যদিও ইক্লোসার সম্পর্ক ভাল না তারপরও ওরা পাওয়ার স্টেশনের কম্পিউটার হ্যাক করার মত দুঃসাহস দেখাবে না। ওরা নিজেরাও বিপদের মধ্যে আছে। এছাড়াও ওদের টেকনোলজি এত উঁচু মানের না যে ওরা এই কাজ করতে পারে। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া আর কারো পক্ষেই পাওয়ার স্টেশনের কম্পিউটার হ্যাক করা সম্ভব নয়। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশ এই গর্হিত কাজটি করবে? নাহ, এমনটি হতে পারে না। বাংলাদেশ কাজ করে সমগ্র মানবজাতির জন্য। তারা কাজ করে মানবকল্যানে। তাই তাদের মধ্যে এই কাজ করার কথা চিন্তাও আসবে না। তাহলে এই হ্যাক কে করলো? কাল অফিসে গিয়ে কম্পিউটারের সিকিউরিটি সিস্টেম ভালভাবে চেক করতে হবে। তাহলে হয়তোবা কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব।

তিন.

ঘুম থেকে উঠে নিজের রুমকে চিনতে পারছে না ডেভিলা। মনে হচ্ছে অন্য কোন জগতে চলে এসেছে সে। সতর্কতার সাথে সে চারদিকে লক্ষ্য করলো। না, ও তো ঠিক জায়গাতেই আছে। এটাই তো ওর রুম। কিন্তু কেন এরকম মনে হচ্ছে? চারিদিক কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে আছে। মনে হচ্ছে রুমের ভিতর বড় ধরনের কোন সুনামি বয়ে গিয়েছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে স্কাই কার নিয়ে ডেভিলা ইক্লোসার মহাকাশ স্টেশনের কন্ট্রোলরুমের দিকে রওনা দিল।

ইক্লোসার কন্ট্রোলরুমে পা দিয়ে একই অবস্থা দেখতে পেল ডেভিলা। একটি মেয়ে ডেভিলার দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। ওর নাম নিলা, নিলা ড্যানিলা। ডেভিলার সাথে একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করে।

“ডঃ কেইথ তোমাকে খুঁজছেন। দ্রুত দেখা কর।” এতটুকু বলেই নিলা আবার ছুটে চললো। দেখে মনে হচ্ছে ওকে যেন ভূতে তাড়া করছে। চোখে মুখে সেরকমই আতংকের ছাপ।

ডঃ কেইথের রুমের দিকে হাটা শুরু করলো ডেভিলা। একটা বড় করিডোর পেরিয়ে ডঃ কেইথের রুমে প্রবেশ করলো সে।

ডঃ কেইথের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো ডেভিলা। মনে হচ্ছে ডঃ কেইথের বয়স ২০ বছর বেড়ে গিয়েছে। চোখে মুখে দুশ্চিন্তা ও আতংকের ছাপ। ডেভিলাকে দেখে কিছুটা নিঃশ্বাস ফেললো ডঃ কেইথ।

“আজকেও একটা বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১ ঘণ্টা ১০ সেকেন্ড ইক্লোসার পাওয়ার অফ ছিল। এমনকি ব্যাকআপ পাওয়ারও চালু করা যায়নি।” কোন ভূমিকা ছাড়া কথা বলতে শুরু করলো ডঃ কেইথ।

আঁতকে উঠলো ডেভিলা। ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ থাকার কারনেই তাহলে মহাকাশ স্টেশনের প্রতিটি রুমের এই বেহাল অবস্থা! কারেন্ট না থাকা মানে সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে ছিল। মানুষের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, প্রতিটি রোবটের কার্যক্রম, এমনকি বাথরুমে যাওয়া পর্যন্ত। বাথরুমের কথা মনে হতেই ডেভিলার হাসি পেল। যারা বাথরুমের জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ছিল তাদের কি অবস্থা হয়েছিল? বাথরুম পেলেও কোন কিছু করার ছিল না। হঠাৎ মনে হলো অক্সিজেন সাপ্লাইের কথা।

“তাহলে স্যার অক্সিজেন সাপ্লাই কিভাবে চালু ছিল?”

“এটাইতো অবাক করার বিষয় ডেভিলা! সমস্ত পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ থাকলেও শুধুমাত্র যে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর অক্সিজেন সাপ্লাইের কাজে ব্যবহার করা হত সেটি চালু ছিল। তাই কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নাহলে আজকে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।” বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দিল ডঃ কেইথ।

“তাহলে তো খুব অদ্ভুত ব্যাপার স্যার।”

“হুম, দারুণ অদ্ভুত। তারপর, তোমার কি অবস্থা? কিছু বের করতে পারলে?”

“জি স্যার, সমস্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমার কাছে মনে হচ্ছে কেউ আমাদের সিকিউরিটি সিস্টেম হ্যাক করছে এবং কিছু সময় ধরে জ্যাম করে রাখছে।”

ডেভিলার কথা শুনে ড: কেইথের চোয়াল কিছুটা ঝুলে পড়লো। কিছুটা চিন্তা করে বলল, “তাই হবে হয়তো। তাহলে তুমি কম্পিউটারগুলো ভালভাবে চেক করে দেখ। প্রয়োজন হলে হ্যাডুইনকে সাথে রাখতে পারো। ও এ যুগের সেরা প্রোগ্রামারদের একজন। আর কোন দরকার হলে অবশ্যই সাথে সাথে জানাবে।”

“জি স্যার, অবশ্যই জানাবো।”

“ওহ ভাল কথা, সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য সহকারে ইন্টার গ্যালাক্টিক বুলেটিনে ২ মাত্রার একটা সতর্ক সঙ্কেত পাঠিয়ে দাও।”

ড: কেইথের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সার্ভার রুমের দিকে রওনা দিল ডেভিলা। এই সময় বিপ বিপ শব্দে পকেটের ডিভাইসটা ভাইব্রেট করে উঠলো। স্ক্রিনে সাইথ মেহলাইনকে দেখে খুশি হল ডেভিলা।

“কি খবর বলতো? তোমাদের ইক্লোসাতে খুব বড় ধরনের প্রবলেম হয়েছে নাকি?” ডেভিলাকে কিছু বলতে না দিয়েই প্রশ্ন করে উঠলো মেহলাইন।

“হুম, অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সমস্ত পাওয়ার সাপ্লাই জ্যাম করে দিলেও শুধুমাত্র যে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরটি অক্সিজেন সাপ্লাই করতো সেটি চালু ছিল।”

“তাই নাকি?” অনেকটা পুলকিত হয়ে প্রশ্ন করলো সাইথ মেহলাইন।

“হুম তাই, সেজন্যই বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি আমরা।”

“তার মানে হল যারা তোমাদের পাওয়ার স্টেশন জ্যাম করেছিল তাদের মূল টার্গেট ছিল শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। তোমাদের কোন ক্ষতি হোক এটা তারা চায়নি।” অনেকটা গম্ভীর হয়ে বললো সাইথ মেহলাইন।

“তাই তো, আমি তো এইভাবে চিন্তা করিনি!”

“তোমার পাঠানো ডাটা নেড়েচেড়ে দেখার সময় একটা অবাক করা বিষয় লক্ষ্য করলাম। যেই ফ্রিকোয়েন্সি প্রবেশ করার সাথে সাথে সমস্ত কম্পিউটার জ্যাম হয়ে গিয়েছিল সে রকম কোন ফ্রিকোয়েন্সি আজ পর্যন্ত কেউ ব্যবহার করেনি বা সে রকম কোন ফ্রিকোয়েন্সি আজ পর্যন্ত দেখাও যায়নি।”

“আগে দেখা যায়নি তো কি হয়েছে! এখন তৈরি করেছে। বিষয়টি এমন নয় যে কেউ তৈরি করতে পারবে না। তোমাদের দ্বারা তো সবকিছুই সম্ভব।”

“দেখ ডেভিলা, কোন মানুষের ক্ষতি হয়নি বলে ধারণা করবে কাজটা আমরা করেছি এইটা কিন্তু ঠিক না। আমাদের কিছু আদর্শ আছে।” অনেকটা রাগান্বিত হয়ে বললো সাইথ মেহলাইন।

“আরে, আমি তো কথার কথা বললাম। আমাকেতো সমস্ত দিক নিয়েই চিন্তা ভাবনা করতে হয়, তাই বললাম আরকি।”

“ওকে, ঠিক আছে। যদি ইচ্ছা হয় বাকি ডাটাগুলো পাঠিয়ে দিও। বাই।”

সাইথ মেহলাইনকে এইভাবে রাগানো ঠিক হয়নি। এই ভেবে নিজেকে শাসালো ডেভিলা। সাইথ মেহলাইনের সাথে কথা বলতে বলতে সার্ভার রুমের সামনে চলে এসেছে ডেভিলা।

সার্ভার রুমে প্রবেশ করে একে একে সব ক’টি কম্পিউটারের ডাটা চেক করে দেখছে ডেভিলা। চেক করতে গিয়ে খুব অবাকই হয়েছে সে। যেই ১ ঘণ্টা পাওয়ার ছিল না সেই ১ ঘণ্টার কোন ডাটাই পাওয়া যাচ্ছে না। কোন ভিডিও, কোন অডিও, কোন ফটো বা যে কোন ধরনের ইনফরমেশন, আগের দিন যে ফ্রিকোয়েন্সি পেয়েছিল সে ধরনের কোন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। সাইথ মেহলাইনের সাথে কথা বলার সময় কয়েকটি বিষয় তার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। প্রথম বিষয়টি হল, একটি খুবই নিম্ন মাত্রার ফ্রিকোয়েন্সি পাঠানো হয়েছে। হতে পারে পৃথিবীর কেউ এই কাজটা করেছে কিংবা পৃথিবীর বাইরের কেউ। দ্বিতীয় বিষয়টি হল, সমস্ত সিস্টেম জ্যাম করা হয়েছিল, অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম বাদে। তৃতীয়ত, যে এই কাজটি করেছে সে শুধু চেয়েছে ইক্লোসার ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে, এখানকার মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য।

new pic

চার

“কিন্তু কেন বাঁচিয়ে রাখতে চাইবে?” প্রশ্ন করে বসলো ইক্লোসার মহা-পরিচালক ড: জন বোলডেন। ইক্লোসার জরুরি অ্যাডমিন কাউন্সিল মিটিং বসেছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে রবার্ট ডেভিলাকে। ডেভিলা শুরু থেকে সমস্ত বিষয় বর্ণনা করেছে। ডেভিলার প্রেজেন্টেশন শেষ সবার আগে প্রশ্ন করে বসলো ডঃ জন বোলডেন।

“দুঃখিত স্যার, আমি এই ‘কেন’-র উত্তরটা এখনও খুঁজে পাইনি। খোঁজার চেষ্টা করছি।”

ডেভিলার উত্তর শুনে অনেকটা হতাশ মনে হল ডঃ জনকে। সমস্ত হল রুমে পিনপতন নীরবতা। সবাই চিন্তা করছে। হল রুমে উপস্থিত সবার চেহারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে সবাই যেন ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে গিয়েছে। যেখান থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারছে না।

“আমাদের বাঁচিয়ে রাখার কারণ আমার কাছে পরিষ্কার” নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠলো ড: কেইথ।

“আমারও তাই মনে হয়।” বলে উঠলো ডেভিলা। হলরুমে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ড: কেইথ ও ডেভিলা পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। এরকম আরও অনেকবার হয়েছে। ড: কেইথ ও ডেভিলা পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলে নিজেদের মনের কথা অনেকাংশে বুঝতে পারে। গম্ভীর হয়ে আবারও বলতে শুরু করলো ডেভিলা।

“আক্রমণকারীর টার্গেট আমাদের ধ্বংস করা নয় বরং আমাদের ব্যবহার করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আমাদের গিনিপিগ বানানো। কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের ব্যবহার করা।”

ডেভিলার কথা শুনে হলরুমের সবাই যেন আঁতকে উঠলো। সবার দেহে একধরনের অজানা শিহরণ বয়ে গেল। একধরনের চাপা আতংকের মধ্যে ড: কেইথ বলে উঠলো,

“ডেভিলা যা বলেছে আমার কাছে তাই মনে হয়। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। কারো কোন ভিন্ন বক্তব্য থাকলে বলতে পারেন।”

কেউ আর কোন কথা বললো না। সবাই নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকলো। কিভাবে এই অজানা শত্রুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে। এমনকি ওরা জানেও না রোবরে মত কিভাবে ওদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কি ধরনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করানোর জন্য ওদেরকে গিনিপিগ বানানো হবে। এই সব প্রশ্নের উত্তর অস্পষ্ট রেখেই সেদিনের সভা শেষ করা হল।

পাঁচ.

ডেভিলার ব্যক্তিগত রিসার্চ রুম।

পকেট থেকে বোতামের মত একটা মিনি ডিভাইস বের করে টিপে ধরলো। ডেভিলার সামনে কম্পিউটারের মনিটরের মত একধরেনের স্ক্রিন ভেসে উঠলো। এই মিনি কম্পিউটারকে ডেভিলা তার মেইন কম্পিউটারের সাথে নেটওয়ার্কিং করলো। ঘটনা ঘটার প্রথম দিন সে একটা মাইক্রো কম্পিউটার সার্ভার রুমে রেখে এসেছিল। মেইন সার্ভারের সাথে এটার কোন কানেকশন ছিল না। নিজস্ব সিস্টেম ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা দিয়ে এইটা বাংলাদেশের একটি স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্ত ছিল।  প্রথম যেদিন সাইথ মেহলাইনকে ইক্লোসার প্রবলেম নিয়ে ডাটা মেইল করেছিল সেদিনই ফিরতি মেইলে সাইথ মেহলাইন তাকে এই পরামর্শ দিয়েছে এবং স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্তির বিষয়টি সে-ই করেছিল।

ডেভিলা উত্তেজনা সহকারে মাইক্রো কম্পিউটারের সমস্ত ডাটা চেক করতে শুরু করলো। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ডেভিলা নিজেকে সফল মনে করলো। মাইক্রো কম্পিউটারটি পুরো সময় ধরে সচল ছিল। সমস্ত ডাটা নিয়ে ডেভিলা একে একে চেক করতে শুরু করলো। প্রথমে চেক করলো যখন পাওয়ার অফ ছিল তখন সার্ভার রুমে কী ঘটেছিল। সার্চ দিয়ে তখনকার রেকর্ডকৃত ভিডিও দেখতে পেল। রেকর্ড করা ভিডিও দেখে সে কিছুটা অবাক হল। সার্ভাররুমের ইন-চার্জ মি: হ্যানুয়েলের কার্যক্রমে সে কিছুটা অস্বাভাবিক ভাব লক্ষ্য করলো। যখন পাওয়ার অফ হয়ে গিয়েছে তখন হ্যানুয়েল সার্ভার রুম থেকে বের হয়ে গেল এবং ফিরে আসলো ইলেকট্রিসিটি চালু হওয়ার ৫ মিঃ আগে। ফিরে আসার সাথে সাথে সে মাদার কম্পিউটার অন করে ফেললো। এবং সমস্ত কম্পিউটার থেকে সর্বশেষ ১ ঘণ্টার সমস্ত ডাটা মুছে ফেলতে শুরু করলো। আর হ্যানুয়েলের সাথে বাকি ২ জন অফিসার ঘুমিয়ে ছিল। ইলেক্ট্রিসিটি চালু হওয়ার সাথে সাথে তারা উঠে পড়লো। তাদের আচরণ দেখে মনে হল যেন কিছুই হয়নি।

উত্তেজনায় থাকতে না পেরে সাইথ মেহলাইনকে কল করলো ডেভিলা। কল রিসিভ করেই সাইথ মেহলাইন বলে উঠলো,

“কী ব্যাপার? আমার বুদ্ধিতে নিশ্চয়ই কাজ হয়েছে?”

“তুমি কি করে জানলে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো ডেভিলা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলো,

“বুঝেছি, তুমি স্পেস স্টেশন থেকে সকল ইনফর্মেশন নিয়ে নিয়েছ, তাই না?”

“হুম, যাক এত দ্রুত বোঝার জন্য ধন্যবাদ।”

“কিন্তু হ্যানুয়েল কেন এই কাজটি করলো? সে কি কোন প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে?”

“হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে সেটা মনে হচ্ছে না। হয়ত আরও এমন সিরিয়াস বিষয় আছে যা আমরা ধরতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে সেটা হতে যাচ্ছে এমন একটা ভয়ংকর বিষয় যার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত নই।”

“তোমার কাছে এমন কি ইনফর্মেশন আছে যার ভিত্তিতে তুমি এই কথা বলছো?”

“গত ১ সপ্তাহ আগে আমাদের নেপচুনের খুব কাছে একটা অজানা ফ্রিকোয়েন্সি ধরা পরেছে। তোমাদের ইক্লোসাতে যে ফ্রিকোয়েন্সি ধরা পড়েছে তার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে এটি। এ ছাড়াও আমাদের স্পেস স্টেশনের স্যাটেলাইটে এমন কিছু আলোক-চিত্র ও তথ্য ধরা পড়েছে যেটা নেপচুনের খুব নিকটেই এক অজানা স্পেসশিপের উপস্থিতি নিশ্চিত করছে। তবে আমরা তাদের অবস্থান এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি।”

“তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ অন্য কোন গ্যলাক্সি থেকে আসা কোন স্পেসশিপ আমাদের স্পেস স্টেশনের খুবই কাছে অবস্থান করছে আর ইক্লোসাতে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে বিশেষ করে হ্যানুয়েলের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক আছে?”

“হুম, আমার কাছে এমনই মনে হচ্ছে।”

“তাহলে ভিনগ্রহের প্রাণীর সাথে হ্যানুয়েলের সম্পর্ক বা যোগাযোগ তৈরি হল কিভাবে?”

“আসলেই এই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার না। তবে আমার মনে হচ্ছে হ্যানুয়েল আসলে জানেই না যে, সে কারো নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি তার অজান্তেই তাকে কন্ট্রোল করা হচ্ছে। ঠিক রোবটের মত।”

“ও মাই গড। আমার কাছে সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার। আমাদের কেন বাঁচিয়ে রাখতে চাইবে এই বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেল। তাহলে ওই ভিনগ্রহের প্রাণী মানে এলিয়েনরা আমাদের গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করবে? আমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে? কিন্তু কিভাবে তারা এই কাজটি করবে?”

“আমিও সেই বিষয়টি নিয়েই ভাবছি। কিন্তু এখনও উত্তরের ধারে কাছেও পোঁছাতে পারিনি। এর উত্তর জানতে হলে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।”

“ওকে, ঠিক আছে। আমার সাথে সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” আর কিছু না বলে ডেভিলা লাইন কেটে দিল।

বিপ বিপ শব্দ বেজেই চলছে। কোন ভিডিও মেসেজ এসেছে। ভিডিও মেসেজটি অন করার সাথে সাথে নিলা ড্যনিলার আতঙ্কিত চেহারা ভেসে উঠলো।

“ডেভিলা, ইক্লোসার মহা-পরিচালক ড: জন বোলডেন, সিকিউরিটি ও অপারেশন-ইন-চিপ ড: কেইথ গ্যালেনসহ উচ্চপদস্থ ১০/১২ জন কর্মকর্তা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করতে মহাকাশযান নেবুলাতে চড়ে অ্যানেক্সের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু রওনা দেওয়ার এক ঘণ্টা পর তাদের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইমারজেন্সি কিটে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। নেবুলার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে কেইথ স্যার রেড অ্যালার্ট জারি করে দিয়ে দিয়েছেন এবং নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলছেন। ওহ, আরও একটি কথা, সার্ভার রুমে হ্যানুয়েলের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।”

আর কোন কথা শুনা গেল না। ঝির ঝির স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ডেভিলা। নেবুলাতে যোগাযোগের সমস্ত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো ছিল। ট্রান্সমিটার নষ্ট হয়ে গেলও ডুপ্লিকেট রাখা ছিল। এছাড়াও ইমারজেন্সি কিট রাখা ছিল- যেন ওরা যোগাযোগ করতে না চাইলেও ডেভিলা ইচ্ছা করলে ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু কোন কিছুই কার্যকর নেই এখন আর। ডেভিলার হঠাৎ মনে পড়ল-সৌরম-লের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য স্বয়ংক্রিয় রাডার স্টেশন বসানো আছে। মহাকাশযানটির কাছাকাছি কয়েকটি রাডার স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করে ডেভিলা ছবি নেবে ঠিক করলো।

এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে সম্পূর্ণ মানব জাতি, কিছু না বুঝলেও এটুকু বুঝতে পারলো ডেভিলা। যেখানে মানুষকে রোবট বানিয়ে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। সমস্ত পৃথিবী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। এই অসম যুদ্ধে মানুষ কি জয়ী হতে পারবে? (চলবে..)