।পারভেজ মাহির।

রিফাত ব্যাংকার হতে চায়। কিন্তু হঠাৎ তার মনে হলো, সে কারও অধীনে চাকুরি করবে না। তাহলে উপায়? সে নিজেই একটা ব্যাংক খুলে বসল। ছোট মানুষ, ছোট ব্যাংক; তাই তার ব্যবসাও ছোট। সে খুবই সুন্দর একটা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্ল্যান চালু করল।

তার ব্যাংকে যেকোনো গ্রাহক চাইলে ১ টাকা রাখতে পারবে এবং বছর শেষে ১ টাকা লাভ পাবে, অর্থাৎ বছর শেষে সেই গ্রাহক মোট ২ টাকা পাবে। কেউ ২ টাকা রাখলে সে বছর শেষে ৪ টাকা পাবে, অর্থাৎ দ্বিগুণ হবে।

মাঈন রিফাতের ব্যাংকে ১ টাকা রাখল। তাহলে, ১ম বছর শেষে মাঈনের লাভসহ মোট টাকা হবে ২ টাকা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১ টাকার বিপরীতে ১ টাকা লাভ, এই টাকাটা রিফাত দিবে কীভাবে? বছর শেষে টাকাটা হঠাৎ কোত্থেকে আসবে? অবশ্যই সে কোনো না কোনো ব্যবসা করবে।

byapon

বিষয়টা কি এরকম, সারা বছর সে ব্যবসা করবে, বছর শেষে হঠাৎ করে ১ টাকা যোগ হয়ে যাবে? মোটেই না, বছর শেষে হঠাৎ করে এই টাকাটা যুক্ত হবে না, বরং সারা বছর ধরে একটু একটু করে ব্যবসা করে একটু একটু করে লাভ হবে; এবং এই একটু একটু লাভের সম্মিলিত যোগফল হবে ১ টাকা। সাথে মূল ১ টাকা যোগ করে মোট হবে ২ টাকা।

এই একটু একটু লাভের ব্যাপারটি কী রকম? ১ টাকার বিপরীতে পুরো ১ টাকা লাভ, মানে কিন্তু ১০০% লাভ। অর্থাৎ পুরো বছরে একজন গ্রাহক ১০০% লাভ পাচ্ছে। একটু একটু লাভের ব্যাপারটি বুঝতে আমরা রিফাতের বন্ধু শোয়াইবের কাছে চলে যাই।

শোয়াইব রিফাতকে বলল, “বন্ধু, তোমার ব্যাংকে আমি ১ টাকা রাখব, বছর শেষে একবারে কষ্ট করে আমাকে পুরো ১০০% লাভ দেয়ার দরকার নাই, বরং ছয় মাস পর পর আমাকে অর্ধেক করে (অর্থাৎ ৫০% করে) দুইবার লাভ দিও।” রিফাত ভাবল, বন্ধু মানুষ বলছে, তার জন্য স্পেশাল প্যাকেজ করাই যায়।

ছয় মাস পরে শোয়াইব কিন্তু দ্বিগুণ টাকা পাবে না, কারণ সে অর্ধেক লাভ চেয়েছে। তাহলে সে দেড়গুণ টাকা পাবে। অর্থাৎ ছয় মাস পর তার টাকা হবে = ১ × ১.৫ = ১.৫ টাকা। পরের ছয় মাসে সে আরও দেড়গুণ পাবে, অর্থাৎ বর্তমান ১.৫ টাকার আরও ১.৫ গুণ করলে হবে = ১.৫ × ১.৫ = (১.৫) = ২.২৫ টাকা।

ওয়াও, শোয়াইব কত্ত চালাক! সে বন্ধুকে বুঝাল অর্ধেক লাভ নিবে, কিন্তু আসলে সে বেশি লাভ নিয়ে যাচ্ছে। কেন এরকম হলো? কারণ খুবই সহজ। বছরে একবারে ১০০% লাভ চিন্তা করলে ১ টাকার সাথে আর ১ টাকা লাভ হবে।

কিন্তু ৫০% করে দুইভাগে চিন্তা করলে ব্যাপারটি এরকম দাঁড়ায়- প্রথম ছয়মাসে ৫০% লাভ নিয়ে তখনই ১.৫ টাকা হয়ে গেছে, তাহলে পরের ছয়মাসে মূল ১ টাকার উপর ৫০% = ০.৫ টাকা লাভ তো আসবেই, সাথে প্রথম ছয়মাসের লাভের ০.৫ টাকার উপর ৫০% = ০.২৫ টাকা অতিরিক্ত লাভ হবে। ফলে মোট ২ টাকার জায়গায় ০.২৫ টাকা বেশি হয়ে মোট ২.২৫ টাকা হচ্ছে।

রাফী একটু বেশি চালাক। সে এবার বন্ধু রিফাতকে প্রস্তাব দিল, “বন্ধু, তুমি আমার এই ১ টাকা নাও, এবং মাত্র এক-চতুর্থাংশ করে (২৫% করে) আমাকে ৩ মাস পর পর ৪ বার লাভ দাও।” রিফাত বেচারা আর কী করবে! বলল, “ঠিক আছে।”

তাহলে, রাফী ৩ মাস পর পর কতগুণ পাবে? নিশ্চয় ১.২৫ গুণ (সোয়া এক গুণ)। তাহলে বছরে ৪ বার লাভ নিলে বছর শেষে তার মোট লাভ হবে = ১.২৫ × ১.২৫ × ১.২৫ × ১.২৫ = (১.২৫) = ২.৪৪ টাকা!!!

গণিতবিদ রিশাদ পুরো ব্যাপারটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। সে দেখল,

বছরে ১ বার পুরো ১০০% লাভ নিলে বছর শেষে হয় = (১ + ১) = ২ টাকা।

বছরে ২ বার অর্ধেক করে অর্থাৎ ৫০% করে লাভ নিলে বছর শেষে হয়

= (১ + ০.৫) ={১+(১/২)} = ২.২৫ টাকা।

বছরে ৪ বার ১/৪ করে অর্থাৎ ২৫% করে লাভ নিলে বছর শেষে হয়

= (১ + ০.২৫) = {১+(১/৪)} = ২.৪৪ টাকা।

তাহলে, বছরকে ১২ ভাগে ভাগ করে ফেলি। প্রতি মাসে ১/১২ হারে লাভ নিলে বছর শেষে কত হবে? খুবই সহজ উত্তর-

বছরে ১২ বার (অর্থাৎ প্রতিমাসে) ১/১২ অংশ করে লাভ নিলে বছর শেষে হয়

= {১+(১/১২)}১২ = ২.৬১ টাকা।

বছরে ৩৬৫ বার (অর্থাৎ প্রতিদিন) ১/৩৬৫ অংশ করে লাভ নিলে বছর শেষে হয়

= {১+(১/৩৬৫)}৩৬৫ = ২.৭১ টাকা।

আহ, কত্ত টাকা! শুধু বাড়ছে তো বাড়ছেই! নিশচয়ই এমন ভাবনা হচ্ছে, বছরকে যত ইচ্ছা ভাগে ভাগ করে ফেলি, আর ‘তত’ বার ১/‘তত’ হারে লাভ নিই, তাহলে তো অনেক টাকা হবে। কত ইচ্ছা ভাগে ভাগ করব? ধরি, বছরকে n ভাগে ভাগ করলাম, বছরে n সংখ্যক বার 1/n অংশ করে লাভ নিলে বছর শেষে হবে

={1+(1/n)}n টাকা। বুঝাই যাচ্ছে, n এর মান যত বেশি হবে, তত বেশি টাকা হবে। তাহলে দেখিঃ

চিত্র-১

টাকা কিন্তু বাড়ছেই। কিন্তু…… অনেক টাকা হলো কই!! ১০,০০০ ভাগে ভাগ করলে যা হয়, ১০০,০০০ ভাগে ভাগ করলে তার চেয়ে একটু বাড়ে। একটু মানে শুধু একটু না, খুবই একটু; একেবারেই বেশি একটু, খুবই সামান্য। দশমিকের তিন ঘর পরে গিয়ে বাড়ছে। হ্যাঁ, এই n এর মান বাড়াতে বাড়াতে অসীম পর্যন্ত নিয়ে গেলে যেটা পাওয়া যাবে, তা হলো

2.7182818284590452353602874713527

এটাই হলো e। যাকে বলে Euler’s Number (অয়লার’স নাম্বার)। সুইস গণিতবিদ লেওনার্ড অয়লার (Leonhard Euler) সর্বপ্রথম এই সংখ্যাটিকে e প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করেন। তবে তারও অনেক আগে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডেরই আর একজন গণিতবিদ জ্যাকব বার্নলি (Jacob Bernoulli) এই সংখ্যাটি আবিষ্কার করেন।

তিনি ঠিক এইভাবেই সংখ্যাটি আবিষ্কার করেন, যেভাবে আমরা ওপরে টাকার হিসাব করলাম। তিনি দেখেন যে, এভাবে বছরকে অসংখ্য ভাগে ভাগ করলেও টাকার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে একটা লিমিট পর্যন্ত যায়। কিন্তু তখন তিনি এই লিমিটটির কোনো নাম দেন নি।

১৬৯০ সালে গণিতবিদ লিবনিজ এই সংখ্যাটিকে b দ্বারা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১৭৩১ সালে অয়লার এটিকে e দিয়ে প্রকাশ করেন এবং এটিই আজ পর্যন্ত গৃহীত হয়ে আসছে।

প্রকৃতিতে বিভিন্ন জিনিসের হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনা আমরা অহরহ দেখি। আমরা ছোট থেকে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে বড় হই; বীজ থেকে চারা হয়, চারা থেকে ধীরে ধীরে বড় গাছ হয়। পরিত্যক্ত ঘরে ধুলা-বালির আস্তরণ, লোহার উপর মরিচা পড়া, এগুলা কিন্তু একদিনে হয় না; ধীরে ধীরে জমা হয়।

তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষয়, আমাদের ফোনের ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা, একটু একটু করে কমে। এই যে প্রকৃতির বিভিন্ন হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনা, সবই কিন্তু একটু একটু করে ঘটে। প্রাকৃতিক যেকোনো ঘটনার হ্রাস-বৃদ্ধির এই একটু একটু করে ঘটার গাণিতিক রূপই হচ্ছে e।

একটি শিশু যখন ভুমিষ্ঠ হয়, তখন তার উচ্চতা হয়তো এক ফুট থাকে। এক বছর পর তার উচ্চতা যদি দুই ফুট হয়, এর মানে কিন্তু এই না যে, সে হঠাৎ করে দুই ফুট হয়ে গেছে। বরং তার প্রতিটা কোষ একটি একটি করে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বিভাজিত হয়েছে এবং এই বিভাজনের ফলে প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে তার উচ্চতা একটু একটু করে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বছর শেষে এই একটু একটু বৃদ্ধির ফলাফলস্বরূপ সে দুই ফুট লম্বা হয়ে গেছে।

এটাকে কি আমরা ১০০% বৃদ্ধি বলতে পারি? পুরো বছরে সে ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বছরকে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তে (n ভাগে) ভাগ করলে, প্রতি মুহূর্তে যদি সে ১/n হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে তো তার e ফুট (২.৭১৮২৮১৮…… ফুট) হওয়ার কথা।

কিন্তু সে তো ২ ফুট হয়েছে, অর্থাৎ একটু কম হয়েছে। এর মানে হলো, বছরকে n ভাগে ভাগ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার বৃদ্ধির হার ১/n ছিল না, বরং একটু কম ছিল। আবার এমনও হতে পারে যে, বৃদ্ধির হার ১/n ছিল ঠিকই, কিন্তু বছরকে n এর চেয়ে কিছু কম ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ফলে সে e ফুট না হয়ে ২ ফুট হয়েছে।

যদি বছরকে অসংখ্য ভাগে ভাগ করা হয় (n এর মান অসীমের কাছাকাছি হয়), তাহলে আমরা জানি,

{1+(1/n)}n = e

কিন্তু যদি বছরের ভাগ সংখ্যা n এর চেয়ে একটু কম হয় (ধরি, ভাগ সংখ্যা = 0.693n), তাহলে, বছর শেষে হবে

{1+(1/n)}0.693n = [{1+(1/n)}n]0.693 = [e] 0.693 = 2

তাহলে, যে শিশুটি ১ ফুট থেকে ১ বছর পরে ২ ফুট হয়েছে, তার বৃদ্ধির সমীকরণটা ছিল ওপরের সমীকরণের মতো। সুতরাং যেকোনো প্রাকৃতিক বৃদ্ধিকেই e এর কোন না কোন ঘাত আকারে প্রকাশ করা যায়। আবার যেকোনো প্রাকৃতিক হ্রাস পাওয়ার ঘটনাকেও e এর ঘাত আকারে প্রকাশ করা যায়। সেক্ষেত্রে e এর ঘাত হবে ঋণাত্মক।

চিত্র-২: লিওনার্দ অয়লার

সাধারণ লগারিদমের ভিত্তি হিসাবে ১০ কে ধরা হলেও প্রাকৃতিক লগারিদমের ভিত্তি হিসেবে e কে ধরা হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে প্রকৃতির যেকোন হ্রাস-বৃদ্ধিই e এর ঘাত আকারে হয়। এই প্রাকৃতিক লগারিদমকে আমরা সাধারণত log না লিখে ln লিখি।

ln এর পূর্ণরূপ হলো logarithm natural (প্রাকৃতিক লগারিদম) । অনেকেই একে সহজে উচ্চারণের জন্য “লন” পড়ে থাকেন। আবার কিছু কট্টরপন্থী (!!) একে “লন” বলতে একেবারেই নারাজ। তাদের মতে, একে পড়তে হবে, “এল এন” ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অনেক শিক্ষার্থীকেই হয়তো “লন” আর “এল এন” এর বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে উচ্চারণ যাই হোক না কেন, এটা যে প্রাকৃতিক লগারিদম, আর এটা কেনই বা প্রাকৃতিক সে বিষয়টা হয়তো আমরা বুঝতে পারছি।

e বলার সময় কেন আমি বারবার ‘প্রাকৃতিক’ শব্দটা ব্যবহার করছি, এর মাহাত্ম্যটা কী? এটা বুঝার জন্য আমরা দেড় যুগ পিছনে ফিরে যাই। ৯/১১ এর সেই দুর্ধর্ষ বিমান হামলার মর্মান্তিক ঘটনা নিশ্চয় সবার মনে আছে, যা নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সংঘটিত হয়েছিল। কী ঘটেছিল সেদিন?

একটি বিমান টুইন টাওয়ারের একটির ৮০ তম তলায় আঘাত হেনেছিল। ভবনটির তলা সংখ্যা ছিল ১১০। ৮০ তম তলা বিমানের আঘাতে ধ্বংস হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ওপরের ত্রিশটি ফ্লোর তার ভারসাম্য রাখতে পারেনি, ধ্বংস হওয়াই ছিল তাদের ভাগ্য। কিন্তু নিচের ফ্লোরগুলো ধ্বংস হলো কীভাবে?

ওপরের ধ্বংস ৩১টি ফ্লোরের পুরো ভরটাই এসে পড়েছে ৭৯ তম তলার উপর, ফলে তার ধ্বংসও অনিবার্য। এবার আগের ৩১টি ও নতুন ১টি মোট ৩২টি ফ্লোর এসে পড়ল ৭৮ তম তলার উপর। ফলে ৭৮ তম তলার ধ্বংস আর একটু ত্বরান্বিত হলো। তাহলে ৭৭, ৭৬, ৭৫, …… এদের কী অবস্থা হবে?

প্রতিটি ফ্লোরই আগের ফ্লোরের চেয়ে একটু করে দ্রুত ধ্বংস হবে, কারণ প্রতিবার নতুন একটি করে ফ্লোর ধ্বংস হচ্ছে এবং আগের সবগুলো সহ এই নতুন একটি ধ্বংস ফ্লোর মিলিয়ে আগের চেয়ে একটু বেশি শক্তি নিয়ে পরের ফ্লোর ধ্বংস করছে।

টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ভিডিও দেখলে দেখা যাবে, প্রথমে উপর থেকে খুবই ধীর গতিতে বিল্ডিং ধ্বসে পড়ছে এবং গতি বাড়তে বাড়তে শেষের দিকে এসে নিমিষেই যেন পুরো বিল্ডিং ধ্বসে পড়ল। তার মানে প্রতি এক ফ্লোর পর পর বিল্ডিং ভাঙার গতি বাড়ছে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

কোনো একটি ফ্লোরের ওপরের অংশ যে গতিতে ভাঙবে, নিচের অংশও কি একই গতিতে ভাঙবে? অবশ্যই না, নিচের অংশ একটু বেশি গতিতে ভাঙবে, কারণ তখন ওপরের ধ্বংস ফ্লোরগুলোর পাশাপাশি এই ফ্লোরের ওপরের অংশের ভরও নিচের অংশের ধ্বংসে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে। তাহলে ধ্বংসের গতি কিন্তু এক ফ্লোর পরপর বাড়ছে না, বরং প্রতি ফ্লোরেরই উপর থেকে নিচের দিকে গতি বাড়ছে।

আর একটু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করি। প্রতিটি ফ্লোরের প্রতিটি ইটের দিকে তাকাই। ওপরের ইটের চেয়ে অবশ্যই নিচের ইটটি একটু বেশি গতিতে ভাঙবে। প্রকৃতি কিন্তু ফ্লোর, ইট এইসব চিনে না। সে শুধু উপর থেকে ভাঙতে ভাঙতে নিচে আসে, এবং যতই নিচের দিকে আসে ততই ভাঙার গতি ওপরের ভাঙা অংশগুলোর কারণে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

একটি ফ্লোর পুরো শেষ হবে, তারপর ভাঙার গতি বৃদ্ধি পাবে; অথবা ওপরের ইটটি পুরো ভাঙবে, এরপর নিচের ইটের ভাঙার গতি বৃদ্ধি পাবে, প্রকৃতির বিষয়টা কিন্তু এমন না। বরং একটি ইটের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে কণা, তার চেয়েও ক্ষুদ্র যা আছে, সেইটা ভাঙার যে গতি থাকবে, ঠিক তার নিচের অনুরূপ কণার ভাঙার গতি তার চেয়ে একটু (একটু মানে খুবই একটু) হলেও বেশি হবে।

অর্থাৎ, পুরো বিল্ডিংকে যখন আমরা গুটিকয়েক ফ্লোরে ভাগ না করে, অথবা অনেকগুলো ইটে ভাগ না করে, বরং ইটের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার চেয়েও ক্ষুদ্র অসংখ্য (অসীম) ভাগে ভাগ করব, তখন আমরা প্রকৃতির আচরণটা বুঝতে পারব।

এই অসংখ্য বা অসীম ভাগে ভাগ করলে বৃদ্ধির যে পরিমাপ, সেটাই হচ্ছে e। এজন্যই e হচ্ছে প্রকৃতির সংখ্যা; অনেক বেশি নির্মল, নির্ভেজাল, প্রাকৃতিক। সব ধরনের প্রাকৃতিক হ্রাস-বৃদ্ধি কিন্তু ঠিক e আকারে হয় না, বরং e এর কোনো না কোনো ঘাত আকারে হয়। এই ঘাত বের করার জন্য আমরা ln ব্যবহার করতে পারি।

যদি বছরকে অসংখ্য ভাগে ভাগ করে ১ টাকার উপর লাভসহ মোট ২.৭১৮১৮……… = e টাকা হয়, তাহলে এখানে e এর ঘাত = ln e = 1 । যদি ১ ফুট উচ্চতার একটি শিশু এক বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়ে ২ ফুট হয়, তাহলে e এর ঘাত = ln 2 = 0.693। অর্থাৎ e এর বিভিন্ন ঘাত নির্ধারণ করবে, কোন কিছুর বৃদ্ধি বা হ্রাসের পরিমাণ কেমন।

গণিত ও ভৌতবিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্ষেত্রে e এর সমীকরণের প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের সমীকরণ (N = N0 eλt), রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতির অ্যারেনিয়াস সমীকরণ (k = A e-Ea/RT), সরল দোলন গতির সমীকরণ (x = A eiΘ) এরকম আরও অনেক exponential সমীকরণ। প্রতিটি সমীকরণই গতি বা অন্যকিছুর হ্রাস-বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

 

e এর ব্যাপ্তি শুধু এতটুকুই নয়। e এর আরও অনেক অনেক ধর্ম আছে। e একাধারে একটি অমূলদ (irrational) এবং transcendental সংখ্যা। ex কে ব্যবকলন বা সমাকলন যাই করা হোক না কেন, ex ই পাওয়া যায়। e কে টেইলর সিরিজ বিস্তৃতি আকারেও নিচের মতো করে প্রকাশ করা যায়ঃ

যারা e বিষয়ে আরও অনেক বেশি অনুসন্ধিৎসু, তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও পড়াশুনা করতে পারে। প্রকৃতির কোন ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়। নদীর পানির  উচ্চতা হঠাৎ ৪ মিটার থেকে ৫ মিটার হয় না, একটি গাছ হঠাৎ একদিনে বড় হয় না, হঠাৎ করে কারও ওজন ১০ কেজি বেড়ে যায় না, বরং প্রতিটি ঘটনাই ঘটে নিরবচ্ছিন্নভাবে।

এই যে প্রকৃতির নিরবচ্ছিন্নতা, যেকোনো কিছুকে অনেক যত্নশীলতার মধ্য দিয়ে বাড়তে দেওয়া, দুরন্ত শৈশবে মানব শিশুর বেড়ে উঠা, ধীরে ধীরে আলতো করে মানব মনে মায়ার পরশ বুলিয়ে দেওয়া, এর মধ্য দিয়েই আমরা e কে খুঁজে পাই।

মার্চ-এপ্রিল ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৬

অবলোহিত আলো দেখতে চাও?

মস্তিষ্ক দখল

মহাবিশ্বের স্ফীতি

মাটির ভুবনে

তোমাদের প্রশ্ন আমাদের উত্তর

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন

সহজে মিলাও সুডোকু

ফোটোনিক্স ও গবেষণা

মস্তিষ্ক দখল

ইভিএম কীভাবে কাজ করে?

পৃথিবীর বিপদ যত!

ইউরেনিয়াম: অবিশ্বাস্য শক্তির ভ্রুণ

একটি গ্রহ ও দুটি নিঃসঙ্গ কোটর

মহাশূন্যে বসবাস

চিনে রাখি অসুখগুলি

শুন্যে আমি

চুম্বকত্বের আদ্যপান্ত

অগ্রগতির যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান

মস্তিষ্ক দখল

অনুভূতির রহস্যে!

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

কার্বন ডেটিংয়ের জাদু

চিনে রাখি অসুখগুলি

মস্তিষ্ক দখল

পরমাণু থেকে কণার জগতে

সিন্ধুতীরের মুক্তার কথা

ধূমকেতুর গল্প