।মাহমুদুল হাসান জাবির।

গত সংখ্যায় তোমাদের সাথে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন আর বিগব্যাং নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছিলাম। ওই আলোচনার সাথেই সংশ্লিষ্ট আলোচনা রয়ে গেলো ইনফ্লেশন থিওরি। ইনফ্লেশন শব্দের শাব্দিকভাবে অর্থ করলে হয় মুদ্রাস্ফীতি। এখন এই অর্থের সাথে অ্যানালোজি খাটিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থ নিলে বলা যায় মহাবিশ্ব-স্ফীতি।

গত সংখ্যায় এই মহাবিশ্বের শুরুর পর্যায়ের অবস্থা সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিলো। মহাবিস্ফোরণ পর্যন্ত কী হয়েছিলো‌? হ্যাঁ, আজ সেটা নিয়েই আলোচনা। তবে মন লাগিয়ে ফেলো বইয়ের পাতায়।

প্রথমতই বলে রাখি বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। বর্তমান বিজ্ঞান অনেক থিওরিই আবিষ্কার করে। যা আপাত দৃষ্টিতে সঠিক। বিষয় হলো, এই মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জি বলে একটা বিষয় আছে। ডার্ক এনার্জি মানে অজানা শক্তি। মহাবিশ্বে এই ডার্ক ম্যাটার ৯৫%।

সুতরাং, বিশাল অজানা গহ্বরে আপতিত এই বিজ্ঞান। হতে পারে, এই ডার্ক ম্যাটারের রহস্য উদঘাটনে আজকের ফিজিক্সের বিশাল পরিবর্তন ঘটে যাবে। কিন্তু, তাই বলে বর্তমান বিজ্ঞান ভুল নয়। কারণ, রহস্য উদঘাটনে বর্তমান বিজ্ঞানের আমূল পরিবর্তন নাও ঘটতে পারে।

যাইহোক, তাই বলে আমাদের আজকের আলোচনাও বন্ধ থাকবে না।

ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটারের হিসাব

চিত্র -১: ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটারের হিসাব

১৯৮০ সালে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালেন-গুথ এই তত্ত্বের ধারণা দেন। এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিতে তাকে নতুন একটি কোয়ান্টাম-বলক্ষেত্র উদ্ভাবন করতে হয়। যেটাকে বলা হয় ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্র। তিনি মূলত GUT তত্ত্বের ওপর কাজ করেছিলেন। যার মানে Guard Unified Theory। যাইহোক, আমরা এ বিষয়ে গভীরে না যাই।

এই মহাবিশ্ব শুরু থেকে তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে মহাবিস্ফোরণ পর্যন্ত পৌঁছে। স্ফীতিকরণ, বিচলন এবং রিহিটিং। এক, স্ফীতিকরণ পর্যায় হলো মহাবিশ্বের জন্ম এবং বিগব্যাং ঘটনার মাঝামাঝি সময়ের। মহাবিশ্বের জন্ম হয় সিংগুলারিটি থেকে।

মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময়ের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে যখন মহাবিশ্ব শুরু হয়, তখন থেকে বিগব্যাং মহাবিস্ফোরণ পর্যন্ত স্ফীতিকরণ ঘটে। এই স্ফীতিকরণ মহাবিশ্ব শুরুর প্রায় ১০-৩৫ তম সেকেন্ডে শুরু হয়। স্ফীতিকরণ পর্যায়ে ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্র বিপুল শক্তিতে তীব্র বেগে সম্প্রসারিত হওয়া শুরু করে।

এই স্ফীতিকরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো হলো, হরাইজন প্রবলেম বা দিগন্ত সমস্যা, ফ্ল্যাটনেস প্রবলেম ও কোইন্সিডেন্স স্ক্যান্ডাল। বিশেষত এগুলোই সবচেয়ে বড় সমস্যা। যেসকল সমস্যার সমাধান মূলত ইনফ্লেশন তত্ত্বই দেয়।

স্ফীতিকরণের পূর্বে স্থানের জ্যামিতিক-বক্রতা থাকা সম্ভব ছিলো। কিন্তু, তীব্র স্ফীতিকরণের ফলে এই বক্রতা অতিদ্রুত বিলীন হয়ে যায়। অনেকটা কুঁচকানো চাদরকে টানটান করে বিছিয়ে ফেলার মতো। ফলে, বিগ-ব্যাং শুরুর আগেই মহাবিশ্ব সমতল হয়ে পড়ে। তাই, ফ্ল্যাটনেস-প্রবলেম থাকলো না।

স্ফীতি-তত্ত্ব অনুসারে, আমাদের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই মহাবিশ্ব সমতল ছিলো। এর ফলে কোইন্সিডেন্স স্ক্যান্ডাল সমস্যাও আর থাকে না।

বিজ্ঞানী অ্যালান গুথ

চিত্র-২: বিজ্ঞানী অ্যালান গুথ

তিনটি সমস্যার মধ্যে আরেকটি বড় সমস্যা হলো হরিজন প্রবলেম বা দিগন্ত সমস্যা। বিগব্যাং ঘটনার পরে মহাবিশ্বের দুই প্রান্তে দুইটি CMB রেখা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর মানে হলো Cosmic Microwave Background Radiation বা ব্যাকগ্রাউন্ড বিকিরণ।

এটা খুবই হালকা একটা আভা, যা মাত্র তিন ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রার মতো। মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর। সুতরাং মহাবিশ্বের পশ্চিমে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পুরাতন CMB রেখা রয়েছে। একইভাবে পূর্বেও ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পুরাতন CMB রেখা রয়েছে। এই দুই রেখার তাপমাত্রা বলতে একই।

যদি এদের তারতম্য লক্ষ করো, তবে তা খুবই নগণ্য; প্রায় ০.০০৪ ডিগ্রি কেলভিন। এখন কথা হলো- দুই প্রান্তীয় রেখার দূরত্ব একে অপরের থেকে প্রায় ২৭.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। সুতরাং, এতো পথ পাড়ি দিয়ে এদের একে অপরের কাছাকাছি আসার কোনো সুযোগই নেই।

বিগব্যাং ঘটনার পরও এর কোনো সুযোগ ছিলো না। কিন্তু, CMB-এর ফোটনগুলো যদি কখনোই এভাবে একে অপরের সংস্পর্শে আসার সুযোগ না-ই পায়, তাহলে কীভাবে এতো বেশি দূরত্বে থেকেও এদের তাপমাত্রা একই? এই সমস্যাটাই হলো হরিজন প্রবলেম বা দিগন্ত সমস্যা।

তাহলে এই দিগন্ত সমস্যার সমাধান ইনফ্লেশন কিভাবে দিলো? তা হলো CMB-এর ফোটনগুলো একই ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্র থেকে সৃষ্টি হয়। ঠিক এই কারণেই এদের তাপমাত্রা একই হয়। কিন্তু, একটা কথাও বলেছিলাম যে, তাপমাত্রার তারতম্য ০.০০৪ ডিগ্রি কেলভিন হয়।

byapon.com

যদি একই বলক্ষেত্র থেকে সৃষ্টি হয় তাহলে তারতম্য কেন? সেটার কারণ হলো কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন। যা নিয়ে গত সংখ্যায় তোমাদের সাথে আলোচনা করেছিলাম। ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্রের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের কারণেই মূলত এই সামান্য তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। তাহলে খেয়াল করো দিগন্ত সমস্যা আর রইলো না। ইনফ্লেশন তত্ত্ব এই সমস্যার সমাধান করে দিলো।

দুই, ইনফ্ল্যাটন যখন মহাবিশ্বকে তীব্রবেগে সম্প্রসারণ করা শুরু করেছিলো। তখন স্থানকালের কোনো বক্রতা থাকা সম্ভব ছিলো না। এক প্রকার সমতল। কিন্তু, বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির ওপর ভর করে ওঠা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্রে ঘটে বলে ওই অসমতা নীতির ফলে ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্রের সর্বাংশে সামান্য পরিমাণ বিচলন সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, সামান্য একটু বক্রতা সৃষ্টি করে।

তিন, এবার আসি স্ফীতিকরণের শেষ ধাপে।  সেটা হলো রিহিটিং । এই রিহিটিং পর্যায়টিও কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন দ্বারা প্রভাবিত। স্ফীতিকরণ শেষে ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্রের প্রায় সকল শক্তি পদার্থ এবং কণায় রূপান্তরিত হয়। শক্তি থেকে ভরের এই রূপান্তরকেই বলা হয় রিহিটিং। 

রিহিটিং শেষে ইনফ্ল্যাটন বলক্ষেত্র তার সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে এসে পৌঁছে। যার ফলে শেষ হয় মহাবিশ্বের স্ফীতিকরণ আর শুরু হয় বিগ-ব্যাং। আর গত সংখ্যায় বিগব্যাং নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো। তাহলে তোমরা নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের জন্মসূত্র থেকে মহাবিস্ফোরণ পর্যন্ত সকল পর্যায় বুঝতে পেরেছো!

ইনফোগ্রাফ
মার্চ-এপ্রিল ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৬

মাটির ভুবনে

তোমাদের প্রশ্ন আমাদের উত্তর

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন

সহজে মিলাও সুডোকু

ফোটোনিক্স ও গবেষণা

মস্তিষ্ক দখল

ইভিএম কীভাবে কাজ করে?

পৃথিবীর বিপদ যত!

ইউরেনিয়াম: অবিশ্বাস্য শক্তির ভ্রুণ

একটি গ্রহ ও দুটি নিঃসঙ্গ কোটর

মহাশূন্যে বসবাস

চিনে রাখি অসুখগুলি

শুন্যে আমি

চুম্বকত্বের আদ্যপান্ত

অগ্রগতির যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান

মস্তিষ্ক দখল

অনুভূতির রহস্যে!

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

কার্বন ডেটিংয়ের জাদু

চিনে রাখি অসুখগুলি

মস্তিষ্ক দখল

পরমাণু থেকে কণার জগতে

সিন্ধুতীরের মুক্তার কথা

ধূমকেতুর গল্প