।ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল।
আবার পুরোদমে শুরু হয়ে গেল হাঁড়কাপানো শীত। তাই এবারের ‘চিনে রাখি অসুখগুলি’ পর্বে তোমাদের জন্যে থাকছে শীতের অসুখ নিয়েও একটি লেখা।
শীতে টনসিলের প্রদাহ
চিত্র-১: টনসিল সনাক্তকরণ
টনসিলের বিভিন্ন সমস্যা খুব পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত টনসিলের প্রদাহ। সারাবিশ্বসহ আমাদের দেশে টনসিলের প্রদাহের অনেক রোগী পাওয়া যায়। যদিও টনসিলের সমস্যা সব বয়সেই হতে পারে তবে শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলের প্রদাহ একটু বেশি হয়।
টনসিলের এই প্রদাহকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস। টনসিলাইটিস একিউট বা তীব্র এবং দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। টনসিলের প্রদাহ হলে মূলত গলাব্যথা হবে। গিলতে অসুবিধা হবে। খাবার গেলার সময় গলাব্যাথা হবে।
শরীরে সামান্য জ্বর থেকে অনেক বেশি জ্বর থাকবে। অনেক সময় গলার স্বরের পরিবর্তন হয়। নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ থাকতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণে অনীহা কিংবা নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে গলার বাইরের দিকে গ্রন্থি ফুলে যেতে দেখা যায়।
রোগী কিংবা চিকিৎসক হাত দিলে তা বুঝতে পারেন। অনেক সময় টনসিলের প্রদাহ হলে বমিভাব এবং বমিও হতে দেখা যায়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ভালভাবে ইতিহাস এবং পরীক্ষা করেই টনসিলাইটিস বুঝতে পারেন। টাং ডিপ্রেসর দিয়ে জিহবাকে একটু চেপে ধরে ভিতরে প্রদাহ আছে কিনা তা সহজই বোঝা যায়।
প্রদাহের কারণে টনসিল বড় হয়ে যায় এবং লালাভ হয়ে থাকে। টনসিলের ওপর অনেক সময় আবরণ দেখা যায়। টনসিলাইটিসের নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞের এই পর্যবেক্ষণই কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। টনসিল থেকে একটু রস নিয়ে পরীক্ষা করলে কোন জীবাণু দিয়ে রোগটি হয়েছে তা বোঝা যায়।
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে কারণের ওপর। কারণ যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত হয় তাহলে রোগীকে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। ভাইরাসের জন্য হলে ৫-৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। সেক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
চিকিৎসার পর উপসর্গ চলে গেলেও টনসিলের আকৃতি ছোট হতে বেশ কিছুটা সময় নেয়। এতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কয়েক মাস পর্যন্ত টনসিল বড় থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এবং বারবার টনসিলাইটিস হলে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে।
শীতে টনসিলাইটিসের অনেক রোগী দেখা যায়। তাই এ সময় সাবধানে থাকতে হবে। ঠাণ্ডা যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। টনসিলাইটিস হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসক দেখাতে হবে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
চিত্র-৩: রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিক সনাক্ত
ডায়াবেটিসে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। তবে সবার ক্ষেত্রে কিন্তু লক্ষণ একরকম নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে কোন লক্ষণই থাকেনা। আবার অনেকের লক্ষণ দেখা দিলে মানতে চান না তার ডায়াবেটিস হয়েছে। ডায়াবেটিস হওয়ার প্রথম দিকেই যদি ডায়াগনোসিস করা যায় তবে রোগীর জন্য অনেক ভাল।
ভবিষ্যতে জটিলতা অনেক কমে যায়। তাই ডায়াবেটিসের লক্ষণ সবারই জানা উচিত। বেশিভাগ সময়ই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তখন দেখা যায় শুধু ডায়াবেটিসই নয়, সাথে উচ্চ রক্তচাপও হয়েছে। এদের রক্তে চর্বিও বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস হবার আগেই বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এগুলো বুঝতে পারার সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ডায়াবেটিস হলে ওজন কমে যায়। ওজন কমলে অনেকেই খুশি হন। কিন্তু কোন কারণ ছাড়া এমনিতেই যদি ওজন কমে তবে সাবধান হতেই হবে।
ডায়াবেটিস ছাড়াও আরও কিছু অসুখে ওজন কমে। তাই ওজন কমলে ডাক্তার দেখানো উচিত। ডায়াবেটিস হলে একটু পরপরই পানির তৃষ্ণা পায়। আর বেশি পানি খেলে বারবার মূত্রত্যাগ করার প্রয়োজন বোধ হয়। অনেকে এটাকেই ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ বলে থাকেন।
রক্তে শর্করা বা চিনি বেড়ে গেলে অল্প পরিশ্রমেই শরীর ক্লান্ত হয় যায়। ঘুম পায় বেশি এবং কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ডায়াবেটিস হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। ফলে শরীরে ফাংগাস ইনফেকশনসহ বিভিন্ন ইনফেকশন বেশি হয়।
আর ব্লাড সুগার বেড়ে গেলে যেকোনো ধরনের ইনফেকশন সারতে অনেক বেশি সময় লাগে। ডায়াবেটিক রোগীরা খাওয়ার পরপরই আবার ক্ষুধা অনুভব করেন। বেশি খেলেও কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওজন আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
শরীরে উপরিউক্ত যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দেরি করা যাবেনা। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডায়াবেটিসের রোগী বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে হাজির হন। অনেকেই এমন সময় হাজির হন যে তখন আর তেমন কিছু করার থাকেনা।
সবাইকেই তাই সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিস জীবনের জন্য হুমকি। আজকাল প্রায় সব জায়গায় স্বল্পখরচে ডায়াবেটিস ডায়াগনোসিস করা হয়। সন্দেহ হলেই সাথে সাথে পরীক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৫
No Comment